Home  • Online Tips • Health

কোলেস্টেরল কমানোর কয়েকটি কৌশল

cholesterol
আপনার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কত? আপনি যদি পাঁচ বছর আগে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা দেখে থাকেন এবং সেটার পরিমাণ স্বাভাবিক ছিল বলে আনন্দিত হন; তাহলে কিন্তু ভুল হবে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। চিকিৎসকগণ বলেন যাদের বয়স কুড়ি বছর কিংবা তার চেয়ে বেশী তাদের রক্ত প্রতি পাঁচ বছরে অন্তত একবার পরীক্ষা করে দেখা উচিত। কারো রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা যদি ২০০ মিঃ গ্রাঃ/ ডেসিলিটারের বেশী হয় কিংবা কম ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন কোলেস্টেরল (ক্ষতিকর কোলেস্টেরল)-এর মাত্রা ১০০ মিঃগ্রাঃ/ ডেসিলিটারের বেশী হয় তাহলে এগুলোর পরিমাণ কমানো উচিত। সাধারণত জীবনাচরণ পদ্ধতি পরিবর্তন করে এবং প্রয়োজন হলে ওষুধ সেবন করে ছয় সপ্তাহের মধ্যে এগুলোর পরিমাণ স্বাভাবিক অবস্থায় নামিয়ে আনা যায়। রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখা তেমন কোন কঠিন কাজ নয়। এ জন্য যে কেউ নীচের এগারোটি সহজ কৌশল অনুসরণ করে উপকৃত হতে পারেনঃ প্রথমে কোলেস্টেরলের কাঙ্ক্ষিত মাত্রা ঠিক করুন। আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে আপনার শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কত এবং আপনি কতটুকু কমাতে চান। এটা অনেক উপাদানের উপর নির্ভর করে; যেমন-পরিবারের বাবা-মায়ের হৃদরোগের ইতিহাস আছে কিনা এবং আপনার হৃদরোগ হওয়ার মতো ঝুঁকি রয়েছে কিনা; যেমন-উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপানের অভ্যাস, অতিরিক্ত মেদ-ভুড়ি ইত্যাদি। যাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশী তাদের কম ঘনত্বের কোলেস্টেরল বা ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা ৭০ মিঃ গ্রাঃ / ডেসিলিটারের নীচে থাকা উচিত। আর যাদের হৃদরোগের কোন ঝুঁকি উপাদান নেই তাদের ১৬০ মিঃ গ্রাঃ / ডেসিলিটারের নীচে রাখা যেতে পারে। আজকাল যাদের হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে তাদের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল যত শীঘ্র কমানো যায় ততই মঙ্গলজনক বলে মনে করা হয়। প্রয়োজনে ওষুধ সেবন করতে হবে। যাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশী তাদের অবশ্যই জীবনাচরণ পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু যদি হৃদরোগের নমুনা থাকে তা হলে কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ সেবন করতে হবে। এ সকল ক্ষেত্রে ধূমপান পরিহার যেমন জরুরী তেমন ওষুধ সেবন করাও দরকারি। জীবনাচরণ পদ্ধতির পাশাপাশি কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ সেবন করলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসে। চিকিৎসকগণ কোলেস্টেরল কমানোর জন্য নানা রকম ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন। যেমন- নিয়াসিন, ফাইব্রেটস, স্ট্যাটিনস ইত্যাদি। বর্তমান সময়ে স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধ বেশী জনপ্রিয়। এরা রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল ২০% - ৫০% কমাতে পারে। হাঁটুন এবং ব্যায়াম করুন। শারীরিক পরিশ্রম এবং ব্যায়াম শুধু রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় তাই নয়, উপকারী কোলেস্টেরলের (বেশী ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন কোলেস্টেরল) পরিমাণ ১০% বাড়ায়। মাঝারী পরিমাণ ব্যায়াম কিংবা জোরে জোরে হাঁটলেও এমন উপকার পাওয়া যায়। এজন্য সকল চিকিৎসকের পরামর্শ নৈশ ভোজের পরে কমপক্ষে ৪৫ মিনিট হাঁটুন। কেউ যদি প্রতিদিন দশ হাজার সিঁড়ি উঠানামা করেন তাহলেও উপকৃত হবেন। আর কেউ যদি অফিসে চাকরি করেন, তার উচিত অন্তত প্রতি ঘণ্টায় পাঁচ মিনিট হাঁটা চলাফেরা করা। আপনি যে ধরণের ব্যায়াম করেন না কেন তা নিয়মিত করতে হবে । সপ্তাহে সাত দিন ব্যায়াম করতে পারলে তো খুবই ভালো। অন্যথায় কমপক্ষে পাঁচ দিন ব্যায়াম করতে হবে। চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করুন। কোলেস্টেরল কমানোর একটি সহজ উপায় হচ্ছে ডিমের কুসুম এবং অন্যান্য বেশী কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার পরিহার করা। তবে এটাও ঠিক যে খাবারের কোলেস্টেরলই রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ানোর জন্য শুধুমাত্র দায়ী নয়। মানুষের শরীরের মধ্যেও প্রতিদিন কোলেস্টেরল তৈরি হয়ে থাকে। যে সকল খাবারে সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ বেশী সে সকল খাবারই রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। এজন্য সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যেমন- মাখন , চর্বিযুক্ত গরু ও খাসীর মাংস ইত্যাদির পরিবর্তে অসম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যেমন- সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, জলপাইয়ের তেল, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি বেশী খাওয়া উচিত। আঁশযুক্ত খাবার বেশী করে খান। যে কোন ধরণের সবজী এবং ফলমূল শরীরের জন্য উপকারী। এরা রক্তে কোলেস্টেরলও কমায়। বিশেষত দ্রবণীয় আঁশ পরিপাক নালী থেকে স্পঞ্জের মতো কোলেস্টেরল শুষে নেয়। শিম, বার্লি, ওট ইত্যাদি জাতীয় খাবারে প্রচুর আঁশ থাকে। বেশী করে মাছ খান। মাছ এবং মাছের তেল কোলেস্টেরল কমাতে পারে। এর ভেতর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এটা খুব সহজে রক্ত থেকে কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য ক্ষতিকর চর্বি কমিয়ে ফেলে। প্রত্যেকেরই সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিনবার মাছ খাওয়া উচিত। অধিকাংশ মাছেই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। যদি কেউ মাছ খেতে না পারেন তিনি মাছের তেল থেকে তৈরি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ ক্যাপসুল চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক সেবন করতে পারেন। বিভিন্ন উদ্ভিজ্জাত খাবারেও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। যেমন- সয়াবিন তেল, কাঠ বাদামের তেল ইত্যাদি। গ্রীন টি সেবন করুন। বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে সবুজ চায়ের ভেতরে রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমানোর উপাদান রয়েছে। সবুজ ছ সেবন হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারী। বাদাম খান। বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে প্রমাণিত হয়েছে যে বাদাম খেলে রক্তের কোলেস্টেরল কমে। বিশেষত কাঠ বাদাম এবং কাজু বাদাম উপকারী। বাদামে প্রচুর ক্যালরি রয়েছে। এজন্য পরিমিত পরিমাণে বাদাম খাওয়া উচিত। ধূমপান পরিহার করুন। ধূমপান করলে রক্তে উপকারী কোলেস্টেরল বা বেশী ঘনত্বের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়। অতএব রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবশ্যই ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন । অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। অতএব রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে হলে অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল থাকা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আমাদের সকলের উচিত কোলেস্টেরল সম্পর্কে জানা। উপরের কৌশলগুলি মেনে চললে আমারা রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবো। প্রয়োজনে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কোলেস্টেরল কমাতে ব্যায়াম

কোলেস্টেরল বা রক্তে চর্বি নিয়ে ভাবেন না এমন লোক সম্ভবত কমই পাওয়া যায়। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে কোলেস্টেরল সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুবই কম। কোলেস্টেরল বলতে টোটাল কোলেস্টেরল, এইচডিএল (হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন) বা ভালো কোলেস্টেরল এলডিএর (লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন) বা মন্দ কোলেস্টেরল এবং টিজি (ট্রাইগিস্নসারাইড) বুঝায়। সাধারণতঃ কম চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, মিষ্টি ও দুগ্ধজাত খাবার পরিহার অথবা কম খাওয়া, নিয়মিত ব্যয়াম করলে সার্বিকভাবে রক্তের কোলেস্টেরল কমানো যায়। ভালো কোলেস্টেরল এইচডিএল হার্টের রক্তনালীতে চর্বি জমতে বাধা দেয় এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। অন্যদিকে এলডিএল বা মন্দ কোলেস্টেরল হার্টের রক্তনালীতে জমে হার্টে ব্লক সৃষ্টি করে। ফলশ্রুতিতে হার্ট এ্যাটাক হবার ঝুঁকি বাড়ে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় ভালো কোলেস্টেরল রক্তে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কম থাকে। এই অতি প্রয়োজনীয় কোলেস্টেরল বাড়ানোর তেমন কোন ওষুধ নেই। তবে নিয়মিত ব্যায়াম করলে রক্তের ভালো কোলেস্টেরল যেমন বাড়ে তেমনি মন্দ বা ক্ষতিকর কোলেষ্টেরল পরিমাপ হ্রাস পায়। তাই রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে প্রতিদিন অন্ততঃ ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক, ০৬ জানুয়ারী ২০০৮ লেখকঃ ডাঃ মোড়ল নজরুল ইসলাম চর্মরোগ ও যৌন সমস্যা বিশেষজ্ঞ

Comments 0


Copyright © 2024. Powered by Intellect Software Ltd