Home  • Online Tips • Health
ঘরে নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা উচিত। শিখে নিয়ে মায়ের রক্তচাপ দেখে দিচ্ছেন মেয়ে।

উচ্চ রক্তচাপের চাপে

2382 হঠাৎ করেই মাথাটা কেমন ঘুরছে। বুক ধড়ফড় করছে কিংবা কয়েকটা নির্ঘুম রাত পার করলেন। সবার জোরাজুরিতে রক্তচাপ পরীক্ষা করলেন। ধরা পড়ল আপনার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা। এটি নিয়ে আবার দুশ্চিন্তায় পড়বেন না। কেননা দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দেবে রক্তচাপকে। আসলে রক্তচাপ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। একজন সুস্থ পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে ১০০-১৪০ মিলিমিটার পারদ সংকোচন চাপ ও ৬৫-৯০ মিলিমিটার পারদ প্রসারণ চাপ স্বাভাবিক মাত্রা নির্দেশ করে। আর রক্তচাপ যদি ১৪০/৯০ মিলিমিটার পারদ অথবা এর বেশি হয়, তবেই উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। বিভিন্ন বয়সে শরীরে রক্তচাপের মাত্রা ভিন্ন হয়। আবার একই মানুষের ক্ষেত্রে দিনের বিভিন্ন সময়ে রক্তচাপ বিভিন্ন রকম হতে পারে। উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা, পরিশ্রম, রাগ, ক্রোধ ও পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে রক্তচাপ বাড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত ঘুমালে রক্তচাপ কমে যায়। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির রক্তচাপ বছরে অন্তত একবার মাপা উচিত।’ উচ্চ রক্তচাপকে কমিয়ে নিয়ন্ত্রণে না রাখলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহ, যেমন হূৎপিণ্ড, কিডনি, মস্তিষ্ক ও চোখ যেকোনো সময় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

কেন হয় উচ্চ রক্তচাপ

৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না। যেসব কারণে ধারণা করা হয় যে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে, তেমনই কয়েকটি কারণ হলো কিডনির রোগ, অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি ও পিটুইটারি গ্রন্থির টিউমার, ধমনির বংশগত রোগ, গর্ভধারণ অবস্থায় একলাম্পসিয়া, প্রি-একলাম্পসিয়া হলে, দীর্ঘ দিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধ খেলে, স্টেরয়েড হরমোন গ্রহণ ও ব্যথানাশক কিছু কিছু ওষুধ খেলে।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ

অনেকের শুরুতে রক্তচাপে কোনো উপসর্গ থাকে না। রুটিন চেকআপে বা অন্য কোনো কারণে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে যেমন  মাথাব্যথা, মাথার পেছন দিকে ব্যথা হতে পারে, সকালবেলা এবং হাঁটার সময় ব্যথার তীব্রতা বাড়ে। কারও কারও ক্ষেত্রে মাথা গরম অনুভূত হতে পারে।
 ঘুমের ব্যাঘাত হওয়া।  বুকে চাপ অনুভব হওয়া।  বুক ধড়ফড় করা।  চোখের দৃষ্টিতে অসুবিধা বা ঝাপসা লাগা।  সব সময় খিটখিটে মেজাজ থাকা।

উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে করণীয়

 জীবনযাত্রার পরিবর্তন এনে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।  অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে  খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা: কম চর্বি ও কম কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে।  লবণ নিয়ন্ত্রণ: খাবারে অতিরিক্ত লবণ পরিহার করতে হবে।  নিয়মিত ব্যায়াম: সকাল-সন্ধ্যা হাঁটাচলা, সম্ভব হলে দৌড়ানো, হালকা ব্যায়াম, লিফটে না চড়ে সিঁড়ি ব্যবহার ইত্যাদি।  ধূমপান বাদ দিতে হবে।  ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: যাদের ডায়াবেটিস আছে, তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।  মানসিক ও শারীরিক চাপ সামলাতে হবে।

কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন

এ রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য দুশ্চিন্তাহীন জীবনযাপন করতে হবে। ওজন কমাতে হবে, ছোট মাছ, শাকসবজি ও ফলমূল বেশি খেতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং ডায়াবেটিস থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ওষুধপথ্য সেবন করতে হবে। কোনোক্রমেই চিকিৎসকের নির্দেশ ছাড়া ওষুধ সেবন বন্ধ করা যাবে না। অনেকেই আবার উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত জানার পরও ওষুধ খেতে অনীহা প্রকাশ করেন। কেউ কেউ এমনও ভাবেন যে উচ্চ রক্তচাপ তাঁর দৈনন্দিন জীবনপ্রবাহে কোনো সমস্যা করছে না বা রোগের কোনো লক্ষণ নেই, তাই উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেতে চান না। এই ধারণাও সম্পূর্ণ ভুল। এ ধরনের রোগীরাই হঠাৎ হূদেরাগে আক্রান্ত হন, এমনকি মৃত্যুও হয়ে থাকে। এ ছাড়া বাড়িতে নিয়মিত রক্তচাপ মাপতে হবে। প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। মনে রাখবেন
 ৪০ বছর বয়স পার হলেই প্রত্যেকেরই বছরে একবার রক্তচাপ পরীক্ষা করা উচিত।  হঠাৎ করে ওষুধ বন্ধ রাখা বা অনিয়মিতভাবে ওষুধ গ্রহণ না করা।  ওষুধ গ্রহণ অবস্থায়ও অন্তত প্রতি মাসে একবার রক্তচাপ পরীক্ষা করা।  ফাস্টফুড ও ফ্রোজেন ফুড খাওয়ায় সতর্ক থাকা।  যেহেতু এ রোগে দীর্ঘদিন ওষুধ খেতে হয়, কাজেই বছরে অন্তত একবার কিডনি ও হূৎপিণ্ড পরীক্ষা করানো উচিত।

Comments 0


About Author
Zinia Islam
Copyright © 2024. Powered by Intellect Software Ltd