তারুণ্য ও সুস্থ্যতা বজায় রাখতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট- নামটি হয়তো সকলেই শুনেছেন। আজকাল বিভিন্ন প্রসাধণীর বিজ্ঞাপনে প্রায়ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতির কথা বলা হয়, যা বয়সের ছাপ দূর করে আপনার তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। ঐসব প্রসাধণীতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকলে আমাদের কোনও লাভ হবে কিনা সন্দেহ আছে, কিন্তু দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকলে নি:সন্দেহে আমাদের জন্য উপকারী। আসলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হলো আমাদের শরীরের সুস্থ্যতা ও যৌবন ধরে রাখার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। আসুন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের আরো উপকারের কথা জেনে নিই।
কী এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট?
শুধু শরীর সুস্থ ও সতেজ রাখতেই নয়, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার চেহারায় বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না৷ আমাদের শরীরে যে ক্রমাগত অক্সিডেশন হয়ে চলেছে, তার ফলে তৈরি হচ্ছে ফ্রি-রেডিক্যালস্৷ এই ফ্রি-রেডিক্যালস্ শরীরের মধ্যে নানা রকম চেইন রিঅ্যাকশন শুরু করে৷ এই প্রতিক্রিয়া যদি শরীরের কোষের মধ্যে হয় তাহলে দেখা দিতে পারে নানা গুরুতর সমস্যা, এমনকি কোষের মৃত্যুও হতে পারে৷ আর এখানেই রক্ষাকর্তার ভূমিকাপালন করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট৷ ফ্রি-রেডিক্যালস্ নিষ্ক্রিয় করতে সাহায্য করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট৷
রোগ প্রতিরোধে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
উপরের কথাগুলি পড়ে নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে, কোন কোন রোগ প্রতিরোধে উপকারি এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট? আপাতদৃষ্টিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের গুরুত্ব আমরা অনুধাবন করতে না পারলেও, এটি মারাত্বক সব রোগ প্রতিরোধে কাজ করে। এরকম কিছু রোগ হলো: ক্যানসার , হৃদরোগ, ডায়বেটিস, ওবিসিটি(স্থুলতা), স্ট্রেস, নার্ভের অসুখ, অ্যালঝেইমার, মাসকুলার ডিজেনারেশন, বয়সের ছাপ, চুল পরাসহ আরো নানা শারীরিক সমস্যা।
কী খেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাবো?
ভিটামিন ই, ভিটামিন সি, ক্যারোটিন, লাইকোপেন, লুটেন-এই সবেতেই মজুত রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট৷ এখন কথা হচ্ছে, এই সব তো আর দোকানে আলাদা করে কিনতে পাওয়া যায় না! তাহলে উপায়? উপায় একটাই প্রতিদিন এমন সব খাবার খাওয়া যাতে ভিটামিন ই, ভিটামিন সি, ক্যারোটিন, লাইকোপেন, লুটেন রয়েছে৷ চিন্তার কিছু না, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার জন্যে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হবে না, অসামান্য কোনও গবেষণাও করতে হবে না৷ আমাদের পরিচিত অনেক শাক-সবজি ও ফলেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট৷ প্রয়োজন শুধুসেই সব খাবার চিনে নেওয়ার৷ এমনই কিছু খাবারের সন্ধান দেওয়া হল–
* আপেল, আভোকাডো, স্ট্রবেরি, ব্ল্যাকবেরি, কিউয়ি, চেরি, ন্যাশপাতি, খেজুর, আনারস, পেয়ারা, কমলালেবু, পেঁপে৷
* পালং শাক, বাঁধাকপি, আলু, মিষ্টি আলু, ব্রকোলি, কুমড়ো, গাজর
* গ্রিন টি, কফি, রেড ওয়াইন
* আখরোট, আলমন্ড, পেস্তা, হ্যাজেলনাট
* লবঙ্গ, দারচিনি, আদা, অরিগ্যানো, হলুদগুঁড়ো
* ওটস, রাজমা (শিমের বীচি), ব্রাউন রাইস (বা ঢেঁকি ছাঁটা চাল), ব্রাউন ব্রেড, ডার্ক চকোলেট
আমাদের প্রত্যেকেরই নির্দিষ্ট কিছু অভ্যাস আছে৷ দীর্ঘদিন ধরে সেই সব অভ্যাস তৈরি হয়েছে৷ যেমন ধরুন বেশিরভাগ মানুষই সকালে উঠে চিনি দিয়ে দুধ চা খাওয়া পছন্দ করেন৷ বহু দিন ধরে তেমনটাই করে আসছেন৷ এমন একজনকে হুট করে একদিন যদি বলা হয় যে তাঁকে এই সব ছেড়ে শুধুমাত্র গ্রিনটি খেতে হবে তা হলে তাঁরপক্ষে খুবই কষ্টকর হবে, হয়তো তিনি মানতেই চাইবেন না৷ এজন্য, খাওয়ার অভ্যাসে এক সঙ্গে সব রকম পরিবর্তন না এনে ধীরে ধীরে একটি-দুটি করে পরিবর্তন সংযোজন করুন৷ করছি -করব করে ফেলে রাখবেন না৷ শুরুটা আজ থেকেই করুন৷ হোক না ছোট কোনও পদক্ষেপ৷ কিন্তু সুস্থ্য ও সতেজ থাকার দিকে প্রথম পা আজই বাড়ান৷ আরও একটা কথা, হেলদি ডায়েটের সঙ্গে এক্সারসাইজেরও কিন্তু গভীর যোগাযোগ৷ বলছিনা যে সবাইকে জিমে ছুটতে হবে, কিন্তু প্রতিদিন সামান্য ফ্রিহ্যান্ডএক্সারসাইজ তো করতেইপারেন৷ কিংবা মর্নিং অথবা ইভনিং ওয়াক? না, প্লিজ, সময় নেই, এই অজুহাত দেখাবেন না৷ কারণ ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়৷ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক্সারসাইজের জন্যে অন্তত ১৫ মিনিট সময় বের করতে আপনি পারবেনই৷ একবার চেষ্টাতো করে দেখুন৷
Comments 1