Home  • Online Tips • Health

শীতে ত্বক থাকুক সয্তনে

3188 এসেছে শীত, সাথে এসেছে কিছু সমস্যাও। আপনার সাধের ত্বকেও হতে পারে কিছু আক্রমন। শীতকালে ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়, চেহারা হারায় তার স্বাভাবিক শ্রী, তাই ত্বকের বিশেষ যত্ন নেয়া প্রয়োজন। শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়; ফলে বায়ুমন্ডল ত্বক থেকে পানি শুষে নেয়। এই শুষে নেয়ার কারণে ত্বক, ঠোঁট ও পায়ের তালু ফেটে যেতে থাকে। তবে আপনার ত্বকের বিরুদ্ধে শীতের ষড়যন্ত্র আমরা দমন কঠোর হস্তে। বিস্তারিত আলোচনায় স্বাগতম। আমাদের দেহের ৫৬ শতাংশই হলো পানি। আর এর মধ্যে ত্বক নিজেই ধারণ করে ১০ ভাগ। ফলে ত্বক থেকে পানি বেরিয়ে গেলে ত্বক দুর্বল আর অসহায় হয়ে পড়ে। ত্বকের যেসব গ্রন্হি থেকে তেল আর পানি বের হয়ে থাকে তা আর আগের মতো ঘর্ম বা তেল কোনোটাই তৈরি করতে পারে না। এতে ত্বক আরো শুকিয়ে যেতে থাকে। তবে সঠিক ক্রিম, তেল, সাবান, শ্যাম্পুর ব্যবহার, প্রয়োজনীয় খাদ্যগ্রহণ ও জীবনযাত্রার সামান্য পরিবর্তন আনার মাধ্যমে আমরা শীতকালেও ত্বকের সৌন্দর্য থাকবে স্বমহিমায়। শীতে ত্বকের যেসব সমস্যা দেখা দেয় তার মাঝে ঠোঁট ফেটে যাওয়া, হাত ও পায়ের তালু ফেটে যাওয়া, মরা চামড়া উঠা অন্যতম। প্রকৃতির রুক্ষতা ও শুষ্কতা থেকেঠোঁটকে বাঁচাতে খানিকটা বাড়তি যত্ন নিতেই হয়। আর সময়টা যদি হয় শীতকালতাহলে তো জরুরীভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। শীতে ঠোঁট সাধারনত শুষ্কথাকে। এ সময় ঠোঁট ফাটে না এমন মানুষের সংখ্যা নেহায়েতই কম। তাই ঠোঁটেরআদ্রতা ধরে রাখা জরুরি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে রাখবেন? ঠোঁট শরীরের অত্যন্ত সংবেদনশীল অঙ্গ। শরীরের অন্যান্য অংশে রয়েছে ন্যাচারাল তেল উৎপাদক গ্রন্থি, যা ত্বককে সজীব রাখে। কিন্তু ঠোঁটে এ ধরনের কোনো গ্রন্থি নেই। এ জন্য ঠোঁট সব সময় মসৃণ থাকে না। ঠোঁট ফেটে যাওয়া এর একটা কারণ। আর শীতকাল হলে তো এটাই হয়ে দাঁড়ায় আপনার বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের সবচেয়ে বড় শত্রু। কিন্তু, তাই বলে আপনি কি বসে থাকবেন? একদম না। চলুন পাল্টা আঘাত হানি ঠোঁটের যত্নে আপনি যা করতে পারেনঃ *ঠোঁট ফেটে মরা চামড়া উঠলে সেটা হাত দিয়ে টেনে তুলবেন না। ঠোঁট শুকিয়ে গেলে বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাবেন না। বরং ঠোঁটে একটু বেশি করে ভ্যাসলিন লাগিয়ে রাখুন। নরম হলে টিস্যু দিয়ে হালকাভাবে ঘসে চামড়া তুলে ফেলুন। এরপর অল্প ভ্যাসলিন লাগিয়ে রাখুন। ফেসিয়াল স্ক্রাবেও মরা চামড়া তুলে ফেলা সম্ভব। *কখনও কখনও ঠোঁট ফেটে রক্তও বের হতে পারে। এতে ঠোঁটে ব্যথাও হয়। এসময়ে ঠোঁটে লিপস্টিক না লাগিয়ে বরং গোলাপজলে গ্লিসারিন মিশিয়ে বারবার ঠোঁটে লাগান। উপকার পাবেন *ঠোঁট ফেটে গেলে আউটলাইন করে ভেতরে গ্লসি লিপস্টিক দিতে হবে। লাইনার দিলে ঠোঁটের ফাটা অংশ ঠোঁটের বাইরের অংশে সংক্রমিত হবে না *শীতে কখনোই ঠোঁটে ড্রাই লিপস্টিক দেবেন না। এ সময় ঠোঁট রাঙাতে বেছে নিন গ্লিসারিন লিপস্টিক। ম্যাট লিপস্টিক লাগাতে চাইলে আগে লিপবাম, ময়েশ্চারাইজার বা কোল্ড ক্রিম ব্যবহার করুন *প্রতিদিন রাতে শোবার আগে ঠোঁটের লিপস্টিক খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। পুরো মুখ ভালো করে ধুয়ে গ্লিসারিন ও গোলাপজল মিশিয়ে লাগাতে হবে। এতে ঠোঁটের শুষ্কতা দূর হয়ে ঠোঁট সরস ও মসৃণ হয়ে উঠবে *অবশ্যই ভালো মানের চ্যাপিষ্টিক ব্যবহার করতে পারেন *অবশ্যই ধূমপান, অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন *নখ বা দাঁত দিয়ে ঠোঁটের চামড়া তুলবেন না *এক চামচ দুধে ৫ ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে একদিন পরপর ঠোঁটে লাগালে ঠোঁট নরম থাকে। *ফাটা ঠোঁটেও লিপস্টিক লাগানো অনুচিত। জিহ্বা দিয়ে শুকনা ঠোঁট ভিজাবেন না কখনও। এতে চামড়া আরও শুষ্ক হয়ে পড়ে। *বাদাম বা কোকো বাটার ঠোঁটে লাগালে ফাটার সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। *পর্যাপ্ত তাজা ফলমূল, শাকসবজি, ভিটামিন বি ও সি আছে এমন খাবার খান। ঠোঁটে কালচে ছাপঃ শীতে অনেকের ঠোঁটে কালচে ছাপ পড়ে। অবশ্য শরীরের অতিরিক্ত ক্যাফেইনের উপস্থিতি, রোদে পোড়া বা অ্যালার্জির কারণেও অনেক সময় ঠোঁট স্বাভাবিক রঙ হারিয়ে কালো হয়ে যায়। *এ দাগ দূর করতে শসার সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে নিয়মিত লাগান। *প্রতিদিন বাইরে থেকে ফিরে ঠোঁটটাকে ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে। কারণ ঠোঁটে দীর্ঘসময় লিপস্টিক লেগে থাকলে কালচে ছাপ পড়তে পারে। *মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে আঙুল দিয়ে ম্যাসাজ করে ঠোঁটে লাগাতে পারেন। *ঠোঁটে রোজ দুধের সঙ্গে গোলাপের পাপড়ি বেটে দিলেও ঠোঁটের মসৃণতা বেড়ে যায়। *ঠোঁটে লিপস্টিক সবসময় ভালো ব্র্যান্ডের ব্যবহার করা উচিত। নকল কিংবা নিম্নমানের লিপস্টিক ঠোঁটে লাগালে ঠোঁটের চামড়ার ক্ষতি হয়। *ঠোঁট পরিষ্কার করতে হয় আলতোভাবে। খুব জোরে ঘষলে ঠোঁটের চামড়ার ক্ষতি হয়। এতেও ঠোঁটে কালো দাগ পড়তে পারে। foot-careপা ফেটে গেলেঃ *এক্রোফ্লেভিন দ্রবণে পা কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর পা শুকিয়ে যাওয়ামাত্র ভেসলিন মেখে দিন। *এছাড়াও গ্লিসারিন ও পানির দ্রবণ পায়ে মাখলে পায়ের ফাটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। *পায়ের ফাটা কম হলে অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল ব্যবহারেও ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে এখন বাজারে অনেক রকমের ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায়। এটা আসলে তেল আর পানির একটি মিশ্রণ। এতে থাকে ত্বক কোমলকারী পদার্থ যেমনঃ পেট্রোলিয়াম, ভেজিটেবল অয়েল, ল্যানোলিন, সিলিকন, লিকুইড, প্যারাফিন, গ্লিসারিন, প্লাইকন ইত্যাদি। *শীত এলেই বেশি বেশি করে তৈলাক্ত পদার্থ মাখলে ত্বক ভালো থাকে এবং ফাটা ভাব পরিস্ফুট হয় না। তবে যাদের ফাটা অবস্হা খুব বেশি তাদের ক্ষেত্রে আলফা হাইড্রোক্সি এসিড মাখলে খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়। আর এটি পেতে যদি অসুবিধা হয় তাহলে গ্লিসারিনের সঙ্গে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে ত্বকে মাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়া ত্বকের অন্যান্য সমস্যা প্রসঙ্গেঃ *সমস্যার পর গ্লিসারিন বা ভেসলিন না মেখে বরং ফেটে যাওয়ার আগেই গ্লিসারিন মেখে নেয়া ভালো। *শীতকালে ক্রিম, সাবান যাই ব্যবহার করবেন লক্ষ রাখবেন তা যেন ময়েশ্চারাইজারযুক্ত হয়। *দিনে অন্তত দু’বার ক্রিম ব্যবহার করবেন। আলফা হাইড্রক্সি বা ভিটামিন-ই যুক্ত ক্রিম ব্যবহার করা ভালো। *গোসলের আগে শরীরে অলিভ অয়েল মাখতে পারেন অথবা গোসলের শেষে অল্প পানিতে কিছুটা অলিভ অয়েল দিয়ে গা ধুয়ে নিন। তারপর আলতো করে গা মুছবেন। harvestdec4_2*আমরা হতো ভাবি, শীতকালে সানস্ক্রিন প্রয়োজন হয় না। এটি ভুল ধারণা। ত্বক বিশেষজ্ঞের মতে, অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকারক। অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকে দ্রুত বলিরেখা ফেলতে সহায়তা করে। ত্বকে উপযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে বার্ধক্যজনিত সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। *এটা সত্যি যে, সূর্যরশ্মি সুস্থ ও সুন্দর ত্বকের জন্য প্রয়োজন। এতে যে ভিটামিন পাওয়া যায় তা প্রয়োজনীয়। কিন্তু বেশি সূর্যরশ্মি ও অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকে অপূরণীয় ক্ষতি ও অকালবার্ধক্যের কারণ। সানস্ক্রিন অতিবেগুনি-এর দাহ্যতা কমিয়ে দেয়। শীতকালেও নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি। *শীতে ত্বকের যত্নে আপনাকে অবশ্যই কিছু সময় দিতে হবে। মহিলারা যারা নিয়মিত ফেসিয়াল, স্ক্র্যাব ম্যাসাজ করান তারা শীতকালেও নিয়মিত চালিয়ে যান। শীতকালের জন্য ফেসিয়াল ও স্ক্র্যাব ম্যাসাজ বেশ ভালো। কারণ এতে ত্বকের মরা কোষ উঠে যেতে সাহায্য করে। *শীতকালে ত্বকের যত্নে আপনাকে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও মনোযোগী হতে হবে। শীতের শাকসবজি ও ফল সুন্দর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের জন্য বিশেষ প্রয়োজন। শিম, বরবটি, নানারকম শাক, মটরশুঁটি, ফুলকপি, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন। *দেশী-বিদেশী, হাতের নাগালের সব ফলই প্রতিদিন খাবেন। আপেল, আমলকী কিংবা আমড়া সে যা-ই হোক না কেন। *প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে আধাগ্লাস ঈষদুষ্ণ পানিতে এক চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে নেবেন। তাহলে সুনিশ্চিতভাবেই এই শীতেও সবার ত্বক হবে লাবণ্যময়।

Comments 2


খুব ভাল Facts
আসলে দরকার আছে। তবে মেয়েদের জন্য। ছেলেদের একটু মোরিল হলেই চলে।
About Author
Israt  Jahan
Copyright © 2024. Powered by Intellect Software Ltd