Home  • Online Tips • Health

শীতের সবজির যত পুষ্টি গুণ

3221 শীতে যত ভিন্ন রকম সবজি পাওয়া যায়, সারা বছর জুড়ে তার কিয়দাংশ পাওয়া যায় না। শুধু সহজলভ্যতায় নয় এ সকল সবজির পুষ্টি গুণও অধিক। শীতের প্রতিটি সবজিতেই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেলস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। তাই সুস্থ ও সুন্দর থাকার জন্য এ সকল শাকসবজি প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। জেনে নিন শীতকালীন শাকসবজির পুষ্টি গুণ। গাজরঃ গাজর অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও খাদ্যআঁশসমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি, যা এখন প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। তরকারি বা সালাদ হিসেবে এই সবজি খাওয়া যায়। গাজরে আছে বিটা ক্যারোটিন যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। অন্যান্য উপাদান গুলো অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। গাজরে উপস্থিত ক্যারোটিনয়েড ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। ত্বকের খসখসে ও রোদে পোড়া ভাব দূর করে। গাজরের সাথে মধু মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের মরা কোষ দূর হয় ও ত্বক উজ্জ্বল হয়। টমেটোঃ টমেটো একটি জনপ্রিয় সবজি। ক্যালরিতে ভরপুর এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি। কাঁচা ও পাকা — এই দুই অবস্থাতে টমেটো খাওয়া যায়। টমেটোতে উপস্থিত ভিটামিন-সি ত্বক ও চুলের রুক্ষভাব দূর করে, ঠান্ডাজনিত রোগ ভালো করে। যেকোনো চর্মরোগ, বিশেষত স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে। টমেটোতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা প্রকৃতির ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির বিরুদ্ধে লড়াই করে। টমেটোতে লাইকোপিন আছে যা শরীরের মাংস পেশিকে করে মজবুত, দেহের ক্ষয় রোধ করে, দাঁতের গোড়াকে করে আরও শক্তিশালী, চোখের পুষ্টি জোগায়। পালংশাকঃ পালংশাক উচ্চমানের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর একটি শীতকালীন সবজি। পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও আয়রন আছে। তাই আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ ছাড়াও এটা হূদরোগ এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। পালংশাকের উপাদান সমূহ ক্যান্সার, বিশেষ করে ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এর ক্যারোটিনয়েডস ও শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রস্টেট ক্যান্সার ও ওভারিয়ান ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। তাছাড়া পালংশাক হাড়কে মজবুত করে তুলতে, শরীরের কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। ব্রোকলিঃ ব্রোকলি বা সবুজ ফুলকপি একটি কপিজাতীয় সবজি। শীতকালীন সবজির হিসেবে ব্রোকলি বর্তমানে আমাদের দেশে চাষ করা হচ্ছে। ব্রোকলিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ক্যালসিয়াম বিদ্যমান। ব্রোকলি অত্যন্ত উপাদেয়, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি সবজি। এটি চোখের রোগ, রাতকানা, অস্থি বিকৃতি প্রভৃতির উপসর্গ দূর করে ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ফুলকপিঃ শীতের সুস্বাদু সবজি ফুলকপি। ফুলকপিতে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ও সি। এছাড়া আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও সালফার আছে প্রচুর পরিমাণে। এই সবজিতে আয়রন রয়েছে উচ্চমাত্রায়। রক্ত তৈরিতে আয়রন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গর্ভবতী মা, বাড়ন্ত শিশু ও অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করা মানুষের জন্য ফুলকপি বেশ উপকারী। ফুলকপিতে কোনো চর্বি নেই। কোলেস্টেরলমুক্ত ফুলকপি তাই বৃদ্ধি ও বর্ধনের জন্য উপযোগী। পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধে ফুলকপি বিশেষ কার্যকরী। এছাড়া মূত্রথলি ও প্রোস্টেট, স্তন ও ডিম্বাশয় ক্যান্সার প্রতিরোধে ফুলকপির ভূমিকা অনন্য। ফুলকপিতে থাকা ভিটামিন এ ও সি শীতকালীন বিভিন্ন রোগ যেমন জ্বর, কাশি, সর্দি ও টনসিল প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ফুলকপির ভিটামিন ‘এ’ চোখের জন্যও প্রয়োজনীয়। মূলাঃ শীতের আরেকটি পরিচিত সবজি হলো মূলা। মূলা কাঁচা এবং রান্না উভয় অবস্থায় খাওয়া যায়। মূলা ভিটামিন সি-র সমৃদ্ধ উৎস। মূলার পাতায় এ ভিটামিনের পরিমাণ ছয় গুণ বেশি। মূলা বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এর বিটা-ক্যারোটিন হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। এটি শরীরের ওজন হ্রাস করে। আলসার ও বদহজম দূর করতে সাহায্য করে। কিডনি ও পিত্তথলিতে পাথর তৈরি প্রতিরোধ করে। হুপিং কাশি, কোষ্ঠকাঠিন্য, আর্থ্রাইটিসসহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ভূমিকা পালন করে। দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে ও ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও মূলা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। বাঁধাকপিঃ শীতের টাটকা সবজির মধ্যে বাঁধাকপি অন্যতম। শীতের এই সবজিটি বেশ উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন এবং খেতেও সুস্বাদু। খুব সহজেই তা রান্না করা যায়। বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ ও ‘ই’ আছে। এছাড়া আছে সালফারের মতো খনিজ উপাদান। কাঁচা বাঁধাকপি পাকস্থলীর বর্জ্য পরিষ্কার করে। এছাড়া রান্না করা বাঁধাকপি খাদ্যদ্রব্য হজমে বেশ সহায়ক। কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতেও এই সবজি দারুণ কার্যকর। বাঁধাকপি ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে। বিশেষ করে কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে এই শীতকালীন সবজি বেশ ভূমিকা রাখে। বাঁধাকপি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া বাঁধাকপি মানবদেহের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, আলসার নিরাময় এবং দেহের রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি সাধন করে। ধনেপাতাঃ ধনে পাতায় রয়েছে ভিটামিন ‘সি’ , ভিটামিন ‘এ’ ,ফলিক এসিড, যা ত্বকের জন্য যথেষ্ট প্রয়োজনীয়। এই ভিটামিন গুলো ত্বকে প্রতিদিনের পুষ্টি জোগায়, চুলের ক্ষয়রোধ করে, মুখের ভেতরের নরম অংশ গুলোকে রক্ষা করে। মুখ গহ্‌বরের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ধনে পাতার ভিটামিন ‘এ’ চোখের পুষ্টি জোগায়, রাতকানা রোগ দূর করতে ভূমিকা রাখে। কোলেস্টেরলমুক্ত ধনেপাতা দেহের চর্বির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ধনেপাতায় উপস্থিত আয়রন রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে এবং রক্ত পরিষ্কার রাখতেও অবদান রাখে। এছাড়া ভিটামিন ‘কে’তে ভরপুর ধনেপাতা হাড়ের ভঙ্গুরতা দূর করে শরীরকে শক্ত-সামর্থ্য করে। তবে ধনেপাতা রান্নার চেয়ে কাঁচা খেলে উপকার বেশি পাওয়া যায়। অ্যালঝেইমারস নামে এক ধরনের মস্তিষ্কের রোগ রয়েছে, যা নিরাময়ে ধনে পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ধনে পাতা শীতকালীন ঠোঁট ফাঁটা, ঠান্ডা লেগে যাওয়া, জ্বর জ্বর ভাব দূর করতে যথেষ্ট অবদান রাখে। ধনে পাতায় রয়েছে ভিটামিন ‘সি’তে ভরপুর ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’ নামের এক উপাদান। যা নানাবিধ ঔষধি ভূমিকা পালন করে। শিমঃ শিম সুস্বাদু, পুষ্টিকর, আমিষের একটি ভালো উৎস। এটি সবজি হিসেবে এবং এর শুকনো বীজ ডাল হিসেবে খাওয়া হয়। শিমের পরিপক্ব বীজে প্রচুর আমিষ ও স্নেহজাতীয় পদার্থ আছে। এটি আঁশ-জাতীয় অংশ খাবার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ডায়রিয়ার প্রকোপ কমায়। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে পাকস্থলী ও প্লিহার শক্তি বাড়ায়। লিউকোরিয়াসহ মেয়েদের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, শিশুদের অপুষ্টি দূরীভূত করে। শিমের ফুল রক্ত আমাশয়ের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়। সকল প্রকার শাক সবজিতেই থাকে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান, যা ত্বকের বার্ধক্যরোধে ভূমিকা রাখে, ত্বকের সজীবতা ধরে রাখে। এছাড়া শাক সবজিতে থাকে প্রচুর পানি যা দেহে পানির ঘাটতি পূরণ করে। শাক সবজির এন্টি অক্সিডেন্ট হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। শাক সবজির আঁশ ও এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান খাদ্যনালীর ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আঁশজাতীয় খাবার শাক সবজি গ্রহণে শরীর মুটিয়ে যাওয়ার থেকে রক্ষা পায়। তাই আজই বাড়িতে আনুন অধিক পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ শীতের সবজি। তবে কেনার আগে ফরমালিন মুক্ত কিনা তা যাচাই করার চেষ্টা করুন। সুস্থ ও সুন্দর

Comments 3


Thumbs Up
Valuable post
ato boro post porar time koi summery dile valo hoi
About Author
Zinia Islam
Copyright © 2024. Powered by Intellect Software Ltd