মৃগীরোগ
মৃগীরোগ একপ্রকার মস্তিষ্কের রোগ ; চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় "নিউরোলোজিক্যাল ডিজিজ"। মানব মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালীতে বিঘ্ন সৃষ্টি হলে মৃগীরোগ দেখা দেয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে গবেষকদের ধারণা ছিল মৃগীরোগ থাকলেই ব্যক্তির বুদ্ধি-বিচার-বিবেচনা বোধের উৎকর্ষ কমে যায়। কিন্তু বর্তমানকালের গবেষকরা মনে করেন, মৃগীরোগে আক্রান্তদের খুব কম অংশে বিচার-বুদ্ধিমত্তার ঘাটতি দেখা যায়।
মৃগীরোগ বলতে বারবার হওয়া খিঁচুনির প্রবণতাকেই বোঝায়। এটি মস্তিষ্কের একটি রোগ, যা মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক তরঙ্গের সাময়িক ব্যাহত অবস্থার (শট সার্কিটের
মতো) কারণে হয়ে থাকে। মস্তিষ্ক আমাদের শরীরে বিভিন্ন ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক, সংক্ষিপ্ত ও সাময়িক অতিরিক্ত বৈদ্যুতিক তরঙ্গের জন্য খিঁচুনি হয়ে দেহের নিশ্চলাবস্থা হতে
পারে, যার ফলে অনেকে পড়েও যেতে পারে।
কী কী কারণে হয়?
অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো কারণ ছাড়াই খিঁচুনি হতে পারে। একে বলে ইডিওপ্যাথিক এপিলেপসি। অন্যান্য ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের ক্ষতির মাধ্যমে হয়ে থাকে, যাকে বলে
সিম্পটোমেটিক এপিলেপসি। যেমন-
মাথায় আঘাত পাওয়ার কারণে।
মস্তিষ্কে বা তার ঝিল্লিতে প্রদাহের কারণে।
স্ট্রোক বা পক্ষাঘাত হলে।
বিপাকীয় সমস্যার জন্য।
ব্রেইন টিউমারের কারণে।
খিঁচুনির শুরু:
কিছু কিছু জিনিস বা বিষয় খিচুনির সূত্রপাত ঘটাতে পারে। যেমনঃ
মানসিক চাপ।
ক্লান্তি।
ঘুমের সমস্যা।
অতিরিক্ত মদ্যপান।
খাবার গ্রহণে ব্যাঘাত।
ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ না খাওয়া।
আলোর ঝলক বা কম্পমান আলো (সামান্য কিছু ক্ষেত্রে)।
মৃগীয় ব্যক্তিত্ব
গবেষকরা মৃগীরোগীদের "মৃগীয় ব্যক্তিত্ব" বা "ইপিলেপ্টিক পার্সোনালিটি" নামে অভিহিত করেন। এই এপিলেপ্টিক পার্সোনালিটির বৈশিষ্ট্যগুলো ছিল-
ঝগড়া করার প্রবণতা
অস্বাভাবিক আত্মকেন্দ্রিকতা
খিটখিটে তিরিক্ষি মেজাজ
ধর্মের দিক হতে গোঁড়া
যেকোনো প্রসঙ্গ নিয়েই চিন্তা করতে থাকা ইত্যাদি।
মানসিক প্রতিক্রিয়া
যেসব মানুষ দীর্ঘদিন যাবৎ মৃগীরোগে ভুগছেন তাদের মানসিকতায় কিছু মৌলিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, মৃগীরোগীদের ২০ শতাংশের ক্ষেত্রে এ রকমের স্খায়ী কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। এই পরিবর্তনগুলো হলোঃ
ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন
বুদ্ধিমত্তার ঘাটতি
স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে নিজের ক্ষতিসাধন
বিষণ্ণতাগ্রস্ততা
আবেগ মনোবৃত্তি বৃদ্ধি
আত্মহত্যার প্রবণতা
সিজোফেন্সনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া ইত্যাদি।
চিকিৎসা
মৃগীরোগের উপযুক্ত চিকিৎসা রয়েছে। মৃগীরোগীর ব্যাপারে মানসিক বিশেষজ্ঞ নানাভাবে সাহায্য করতে পারেন। যথাসময়ে চিকিৎসা করা না-হলে জটিলতা বৃদ্ধি পায় এবং তা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে মানসিক সমস্যারও সৃষ্টি হতে পারে।
সঠিক ওষুধ ব্যবহারই হচ্ছে এপিলেপসি চিকিতসার প্রধান উপায়।
প্রতিদিন সঠিক মাত্রায় সঠিক ওষুধ নির্দিষ্ট সময়ে গ্রহণের পর অধিকাংশ ব্যক্তি খিঁচুনিমুক্ত থাকে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়ে থাকে। অ্যারোমাথেরাপির মতো সম্পূরক চিকিতসাও সহায়ক হয়ে থাকে। এ রোগের মৌলিক প্রাথমিক চিকিতসা
সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা খুব দরকার। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির ঝঁুকি অনেকাংশেই কমানো সম্ভব।
Comments 0