ফরমালিন is not ব্যাকটেরিয়া। ফরমালডিহাইডের (রাসায়নিক সংকেত HCHO) ৩৭ থেকে ৪০ শতাংশ জলীয় দ্রবণই হলো ফরমালিন।ফরমালিনে ফরমালডিহাইড ছাড়াও ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মিথানল মিশ্রত থাকে। ফরমালিন এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল বা সংক্রামক ব্যাধি নাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত ফরমালিন মানুষের লাশসহ মৃত প্রাণীর দেহর পচন রোধ করতে ব্যবহার করা হয়। আমরা নিশ্চয় জীব বিজ্ঞান পরীক্ষাগারে কাচের জারে ডুবানো বিভিন্ন স্পেসিম্যান বা নমুনা (মৃতদেহ) দেখেছি যেগুলো ফরমালিন দিয়ে পচন রোধী করে রাখা আছে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে ফরমালডিহাইড ও মিথানল উভয়ই বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ এবং মানব দেহের জন্য ক্ষতির কারন।
দূরীকরণ পদ্ধতিঃ
১। পরীক্ষা করে দেখা গেছে পানিতে ফরমালিনযুক্ত মাছ প্রায় ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে ফরমালিনের মাত্রা শতকরা ৬১ ভাগ কমে যায়।
২। লবনাক্ত পানিতে ফরমালিন দেওয়া মাছ ১ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ ফরমালিনের মাত্রা কমে যায়।
৩। প্রথমে চাল ধোয়া পানিতে ও পরে সাধারণ পানিতে ফরমালিনযুক্ত মাছ ধুলে শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ ফরমালিন দূর হয়।
৪। সবচাইতে কার্যকরী পদ্ধতি হল ভিনেগার ও পানির মিশ্রনে(পানিতে ১০% আয়তন অনুযায়ী) ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে প্রায় শতকরা ১০০ ভাগ ফরমালিন মুক্ত হয়।
শাকসবজি ও ফলমূল থেকে ফরমালিন দূর করা
খাওয়ার ১০ মিনিট আগে গরম লবণ পানিতে ফলমূল ও শাকসবজি বিজিয়ে রাখতে হবে।
সনাক্ত করণঃ
১। ফরমালডিহাইডের দ্রবণের সঙ্গে ২ সিসি ফিনাইল হাইড্রোজাইন হাইড্রোকোরাইড (১%) এবং ১ সিসি ৫% পটাসিয়াম ফেরিসায়ানাড দিয়ে তারপর ৫ সিসি ঘনীভূত হাইড্রোকোরিক অ্যাসিড মেশালে পুরো দ্রবণ গাঢ় গোলাপী রঙ হয়ে থাকে। একে বলা হয় সেরিভারস্ টেস্ট।
২। ফরমালডিহাইডের হালকা দ্রবণ যেমন মাছে ফরমালিন দেয়া আছে তা ধুয়ে তার পানিতে ১ সিসি সোডিয়াম নাইট্রোপ্রোসাইড মেশালে গাঢ় সবুজ নীল রঙ ধারণ করে। এতে ফরমালডিহাইড তথা ফরমালিনের অস্তিত্ব প্রমাণ করে।
উপরে বর্নিত সমস্ত কেমিক্যাল এবং রি-এজেন্ট পাওয়া খুব কঠিন এবং দামও অনেক বেশী।
সহজ এবং সাধারণ একটি পদ্ধতিতে আমরা এই কাজটি করতে পারি, যেমন সন্দেহযুক্ত ফরমালিন মাছ ধুয়ে পানিতে ৩% (আয়তন) হাইড্রোজেন পারক্সাইড মেশালে ফরমালডিহাইড অক্সিডাইজড হয়ে ফরমিক অ্যাসিডে রূপান্তর হয়। ফরমিক এসিড প্রমাণের জন্য সে পানিতে অল্প মারকিউরিক ক্লোরাইড মেশালে সাদা রঙের তলানি পড়বে। তাতেই প্রমাণ হবে ফরমিক অ্যাসিড তথা ফরমালডিহাইড তথা ফরমালিন।
(তথ্য সুত্র: সাইন্স ল্যাবরটেরী কর্তৃক প্রচারিত লিফলেট)
ফরমালিনের প্রভাবঃ
ফরমালিন শরীরে প্রবেশ করলে তার প্রভাব মারাত্মক ক্ষতিকর। ফরমালিন শরীরে প্রবেশের পর লিভার বা যকৃতে মিথানল এনজাইমের উপস্থিতিতে প্রথমে ফরমালডিহাইড এবং পরে ফরমিক অ্যাসিডে পরিণত হয়। দুটি অ্যাসিডের যৌগই শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আমাদের রক্ত বা টিস্যুতে মাত্রাতিরিক্ত ফরমিক অ্যাসিড জমা হলে মেটাবলিক এসিডোসিস উৎপন্ন হয়। এসিডোসিস শরীরের অ্যাসিড বেস এবং আয়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে সেল বা কোষের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা প্রদান করে। তাৎক্ষনিকভাবে পেটের পীড়া, বদহজম, ডায়রিয়া, আলসার চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে। এমনকি লিভার ক্যান্সারও সৃষ্টি করতে পারে।
ফরমালিন যুক্ত ফলমূলসহ অন্যান্য খাবার গ্রহণের ফলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, আ্যাজমা রোগের উপদ্রব হয়। ফুসফুস, শ্বাসনালীতে ক্যান্সার হতে পারে। বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম, মাথাব্যথা ও চোখ জ্বালাপোড়া করতে পারে এবং ফরমালিনযুক্ত মাছ পাকস্থলী, ফুসফস ও শ্বাসনালীতে ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। ফরমালিনযুক্ত খাবারের কারনে পাকস্থলি, অস্থিমজ্জা আক্রান্ত হওয়ার ফলে রক্তশূন্যতাস ও অন্যান্য রক্তের রোগ এমনকি ব্লাড ক্যান্সার হতে পারে। এতে মৃত্যুবিহীন অন্য কোন পথ নাই। ফরমালডিহাইড চোখের রেটিনায় এডিমা সৃষ্টির মাধ্যমে রেটিনার কোষ ধ্বংস করে। ফলে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া গর্ভবর্তী মায়েদের ক্ষেত্রেও মারাত্মক ঝুকি রয়েছে। সন্তান জন্মদেওয়ার ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে প্রসব জটিলতা, বাচ্চার জন্মগত দোষত্রুটি, হাবা-গোবাসহ প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। ফরমালিনযুক্ত খাবারে সকলেই ঝুঁকিতে থাকে তবে বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ ব্যক্তিরা অধিক ঝুঁকিতে থাকে। ফরমালিনযুক্ত দুধ, মাছ, ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার ফলে শিশুদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিন দিন কমে যাচ্ছে আশংকাজনকভাবে। দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন অঙ্গ- পতঙ্গ নষ্ট, বিকলাঙ্গতা ও ক্যান্সারসহ নানা সব মরনব্যাধি। আজকের শিশুরাই তো আগামীর ভবিষ্যৎ। ভেজাল খাবার কিংবা বিষাক্ত কেমিক্যাল আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
Comments 4