Home  • Online Tips • Health

কি ভাবে বুঝবেন আপনার কিডনি ভালো আছে?

মানুষের-শরীরের-গুরুত্বপূর্ণ-অঙ্গগুলোর-মধ্যে মানুষের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে কিডনি অন্যতম। অনেক সময় আমরা কিডনির অনেক ধরণের সমস্যা উপলব্ধি করি, কিন্তু সমস্যাটি গাঢ় না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো পদক্ষেপ নেই না। যার ফলে আমাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।শরীরের রেচন প্রক্রিয়া সহ সব ধরনের বর্জ্য পদার্থ নির্গমনের কাজ এই কিডনীই করে থাকে। তবে কাজ করতে করতে কিডনী যে কোন মুহুর্তে অকেজো হয়ে পড়তে পারে কিংবা কিডনীর কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে। এইসব ক্ষেত্রে কিডনী ড্যামেজ হওয়া থেকে শুরু করে আরো অনেক বড় বড় রোগের সম্মুখীন হওয়াটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিডনী ফেইলিওর এর মত সমস্যা যে কারোই হতে পারে। তাই শুরু থেকে কিডনীর সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত জ্ঞান থাকা জরুরী। কারণ যদি কিডনীর সমস্যার লক্ষণ শুরু থেকে জানা থাকে, তাহলে অল্প থাকতেই মেডিক্যাল চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। চলুন কিডনীর সমস্যার লক্ষণগুলো আগে একবার জেনে নেয়া যাক,

দুর্বলতা

কিডনী সমস্যার অন্যতম প্রধাণ লক্ষণ হচ্ছে দুর্বলতা। আর এই দুর্বলতা আসে রক্তশূন্যতা থেকে। কিডনী যদি ঠিকমত কাজ না করতে পারে তাহলে রক্ত ক্রমাগত দূষিত হতে থাকে। যার কারণে রক্তে নতুন করে ব্লাড সেল উৎপন্ন হয় না। এছাড়াও কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে তা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন এরিথ্রোপ্রোটিন উৎপন্ন করতে পারে না। এই হরমোন বোন ম্যারো থেকে ব্লাড সেল উৎপাদনে সাহায্য করে।

শ্বাসকষ্ট

যখন কিডনী কাজ করা বন্ধ করতে শুরু করে, তখন শরীরের বর্জ্য পদার্থ রক্তে মিশতে শুরু করে। এই বর্জ্য পদার্থের বেশিরভাগই হচ্ছে অম্লীয় পদার্থ। তাই এই বর্জ্য যখন রক্তের সাথে ফুসফুসে পৌঁছায় তখন ফুসফুস সেই বর্জ্য বের করার জন্য কার্বনডাই অক্সাইড ব্যবহার করা শুরু করে। যার কারণে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ফুসফুসে ঢুকতে পারে না। এতে আপনার শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে।

মূত্রের রং পরিবর্তন এবং রক্তক্ষরণ

কিডনীর সমস্যায় মূত্রের রং পরিবর্তন হয়ে যায়। কারণ, কিডনীর অক্ষমতায় রেনাল টিউবিউলস এর ক্ষতি হয়, যা পলিইউরিয়ার সৃষ্টি করে। এর মানে হচ্ছে আপনার অধিক পরিমাণে মূত্র তৈরীর কাজ করে। তবে কিডনীর অক্ষমতা যত বৃদ্ধি পাবে, মূত্রের পরিমাণ ততই কমবে। এবং মূত্রের রং গাঢ় হলুদ কিংবা কমলা রং হয়ে যাবে। সেই সাথে মূত্রের সাথে রক্তক্ষরণ এবং অত্যাধিক ফেনা হতে পারে।

শরীরে চুলকানির উপসর্গ

কিডনীর অক্ষমতায় শরীরে প্রিউরিটাস দেখা দেয়। প্রিউরিটাস আসলে চুলকানির মেডিক্যাল নাম। শরীরের রক্তে যখন বর্জ্য পদার্থ মিশতে শুরু করে তখন চুলকানির উপসর্গ দেখা দেয় কারণ ওই বর্জ্যের মধ্যে ফসফরাস থাকে। যেসব খাবারে ফসফরাস থাকে যেমন দুধজাতীয় খাবার, সেগুলো হজমের পর ফসফরাস বর্জ্য হিসেবে মূত্রের সাথে বের হতে পারে না। যার কারণে এটি রক্তে মিশে চামড়ায় চুলকানি সৃষ্টি করতে থাকে।

চোখে ঝাপসা দেখা কিংবা মানসিক অস্থিরতা

কিডনীর সমস্যা আপনার চোখে ঝাপসা দেখা কিংবা মানসিক অস্থিরতার সৃষ্টি করতে পারে। কারণ শরীরের বর্জ্য পদার্থের একটি বড় অংশ হচ্ছে ইউরিয়া। কিডনীর সমস্যার কারণে ইউরিয়া শরীর থেকে বের না হয়ে বরং রক্তে মিশে যায়। এই দূষিত রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছে মানসিক অস্থিরতা, ঝাপসা দেখা এই ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে। যদি ইউরিয়ার পরিমাণ অত্যাধিক হয় তাহলে তা মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে, যার ফলাফলে রোগী কোমাতে পর্যন্ত চলে যেতে পারেন।

অরুচি

শরীরের বর্জ্য পদার্থের আরেকটি উপাদান হচ্ছে অ্যামোনিয়া। যদি অ্যামোনিয়া রক্তে মেশে তাহলে তা শরীরে প্রোটিন নষ্ট করে ফেলে। কিডনীর অক্ষমতায় শরীর বর্জ্য হিসেবে অ্যামোনিয়া ফিল্টার করতে পারে না। রক্তে অত্যাধিক পরিমাণের অ্যামোনিয়া মুখে অরুচি, ওজন হারানোর মত সমস্যার সৃষ্টি করে।

শরীরে ব্যথা

একটি জেনেটিক কন্ডিশনের কারণে শরীরের অভ্যন্তরে, বিশেষ করে কিডনী এবং লিভারে এক ধরনের ফ্লুইড ভর্তি সিস্ট বা গুটির সৃষ্টি হয়। এই সিস্টের মধ্যে থাকা ফ্লুইড এক ধরনের বিশেষ টক্সিন বহন করে, যা শরীরের শিরা বা ধমনী গুলোতে ক্ষতি করতে পারে। একাধিক শিরার বা ধমনীর ক্ষতি হলে তা শরীরে ব্যথা সৃষ্টি করে। এই ব্যথা সাধারণত ভোঁতা অনুভূতি, খোঁচা কিংবা জ্বলুনীর মত হতে পারে। সাধারণত এই ব্যথাগুলো শরীরের পেছনের অংশে, পায়ে কিংবা কোমরে হতে পারে। তবে মনে রাখবেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিডনীতে সমস্যা হলে কোন ধরনের লক্ষণ দেখা যায় না। কিন্তু তাই বলে আপনি কিডনীর সমস্যা থেকে মুক্ত এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই। সবসময় সচেতন থাকুন, কিডনীর নিয়মিত চেক আপ করুন। তাহলে কিডনীর সমস্যা নিজেকে দূরে রাখা এবং সুস্থ থাকা সম্ভব।

Comments 0


Copyright © 2024. Powered by Intellect Software Ltd