দুধ খাওয়ার ব্যাপারে উচিত বিধিনিষেধ মেনে চলা
দুধে প্রচুর পুষ্টি উপাদান আছে। এতে সম্পৃক্ত স্নেহ পদার্থ, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন 'সি' থাকে। দুধকে একটি প্রায়-সম্পূর্ণ খাবার বলা যায়। কিন্তু এহেন সমৃদ্ধ খাদ্যটিও বুঝে-শুনে খেতে হবে। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, চিকিৎসকরা আমাদের মধ্যে অনেককেই দুধ খেতে নিষেধ করেন বা কম খেতে বলেন। কারণ, তাদের শরীরে ইতোমধ্যেই বাসা বেধেছে এমন সব রোগ, যার মাত্রা দুধ খেলে বেড়ে যাবে। অনেকে আবার দুধ খেয়ে হজম করতে পারেন না; তাই চিকিৎসকরা তাদের দুধ খেতে বারণ করেন।
আগেই বলেছি, দুধ একটি চমত্কার পুষ্টিকর খাদ্য। চিকিৎসকরা দুধ খাওয়ার তিনটি উপযুক্ত সময়ের কথা বলে থাকেন: সকালের নাস্তার সময়; বিকেল চারটার দিকে; এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আধা ঘন্টা আগে। এ তিনটি সময়ের মধ্যে আবার সবচে ভালো সময় হচ্ছে রাতের বেলা। কারণ, দুধ ঘুমের গুণগত মানও উন্নত করে।
তবে, যেমনটি আগেই বলেছি, এমন অনেকে আছেন যাদেরকে চিকিৎসকরা দুধ খাওয়ার ব্যাপারে, বিশেষ করে রাতে দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেন। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা তেমন কয়েক ধরনের মানুষ নিয়ে আলোচনা করবো, যাদের উচিত দুধ কম খাওয়া বা রাতে দুধ না খাওয়া বা দুধ একেবারেই না খাওয়া। এখানে আবারো বলে রাখি, এ ব্যাপারে আপনারা অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ অনুসারে চলবেন।
যাদের কিডনিতে পাথর হয়েছে তাদের দুধের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেন চিকিৎসকরা। আমরা জানি কিডনির পাথরের একটি উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম। আর দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। তাই এ ধরনের রোগীর উচিত দুধ কম খাওয়া এবং রাতে একেবারেই দুধ না খাওয়া। আরো সহজ করে বললে, এ ব্যাপারে তাদের উচিত চিকিত্সকের পরামর্শ মেনে চলা।
যাদের শরীরে 'ল্যাক্টেজ' (lactase) নামক এনজাইমের অভাব আছে, তাদের উচিত দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হওয়া। ল্যাক্টেজ দুধ হজম করতে আমাদের সাহায্য করে। এটি দুধের উপাদান ল্যাক্টোজ (lactose)–কে ভেঙে দেয়। বস্তুত আমাদের শরীর সরাসরি ল্যাক্টোজ গ্রহণ করতে পারে না। তাই ল্যাক্টেজের ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, যাদের শরীরে ল্যাক্টেজের অভাব আছে, তাদের দুধ খাওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ শুনতে হবে।
যাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশের আলসার তথা ডিউডেনাল আলসার আছে বা যাদের 'কোলেসিসটিটিস' (cholecystitis) তথা গলব্লাডারের সমস্যা আছে তাদের উচিত দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হওয়া। কারণ, দুধ এই দুই ধরনের রোগীর রোগ আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
যাদের পেটে অপারেশান করা হয়েছে, তাদের দুধ খাওয়া ততদিন বারণ, যতদিন না তারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠছেন। অর্থাত ঘা শুকিয়ে গেলে, তখন দুধ খাওয়া যাবে।
** আপনাদের মধ্যে যারা শরীরে আয়রন বা লোহার অভাব পূরণের জন্য নিয়মিত আয়রন ট্যাবলেট খাচ্ছেন, তাদের উচিত দুধ না খাওয়া। আমরা জানি, দুধে ক্যালসিয়াম আছে, আছে ফসফেটও। এই পদার্থগুলো আয়রনের সাথে বিক্রিয়া করে আপনার শরীরের ক্ষতি করতে পারে। তাই যতদিন আয়রন ট্যাবলেট খাচ্ছেন, ততদিন দুধ খাওয়া বন্ধ থাকুক। আবার যখন আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া বন্ধ করবেন, তখন দুধ চলতে পারে আগের মতোই।
** যারা লিড (lead) বা সিসা নিয়ে কাজ করেন, তাদের উচিত দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হওয়া। আমরা জানি, সিসা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি রোম, প্রাচীন গ্রিস ও প্রাচীন চীনে বিষ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। অর্থাত সিসা আসলে এক ধরনের বিষ। অন্যদিকে, দুধে আছে ল্যাক্টোজ, যা আমরা আগেই বলেছি। তো, এই ল্যাক্টোজ আমাদের শরীরে সিসাকে জমে থাকতে সাহায্য করে। বুঝতেই পারছেন, কেন চিকিত্সকরা লিড নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদেরকে দুধ খেতে বারণ করেন। তাদের পরামর্শ না-শুনলে আপনার অর্থাত যারা সিসা নিয়ে কাজ করেন তাদের পেট ব্যাথা , মাথা গরম হওয়া, অনিদ্রা রোগ হতে পারে। আর সবচে খারাপ যেটি হতে পারে, তা হচ্ছে শরীরে সিসার বিষক্রিয়া। অতএব সাবধান।
যারা পাকস্থলীর আলসার তথা গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগী, তাদেরও দুধ খাওয়া উচিত নয়। এ ধরনের রোগী দুধ খেলে পেট ব্যথা ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন।
যারা প্যানক্রিয়েটিটিস (Pancreatitis) বা অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ রোগে আক্রান্ত, তাদের উচিত দুধ না-খাওয়া। আমরা জানি, দুধে স্নেহজাতীয় পদার্থ আছে। এ ধরনের উপাদান হজমের জন্য পিত্ত ও অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত এনজাইম প্রয়োজন হয়। যদি অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি দুধ খান, তবে তার অসুস্থতা বেড়ে যাবে।
আপনার কি এলার্জি আছে? থাকলে, দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হোন। কারণ, এলার্জির রোগীদের দুধ খেতে নিষেধ করেন সংশ্লিষ্ট চিকিত্সকরা। দুধ আপনার এলার্জি বাড়িয়ে দিতে পারে। এলার্জির রোগী দুধ খেলে তার পেট ব্যথা ও ডায়রিয়াও হতে পারে। তা ছাড়া, অন্ত্র ফুটো হয়ে রক্তপাতও হতে পারে। অতএব সাবধান।
আসলে, দৈনন্দিন জীবনে আমাদের সাবধান হয়েই চলতে হয়। দুধ খুবই ভালো একটি খাদ্য; অথচ এ খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রেও আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। কিন্তু, আগেও যেমনটি বলেছি, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দিন আপনার চিকিৎসককে। আপনার শরীর অসুস্থ হলে আগে চিকিত্সকের শরণাপন্ন হোন এবং তার পরামর্শ শুনুন। যদি তিনি আপনাকে দুধ খাওয়ার ব্যাপারে কোনো পরামর্শ দেন তবে তা শুনুন এবং মেনে চলুন। আশা করা যায় যে আপনি ভালো থাকবেন।
Comments 0