মিষ্টিকুমড়া দেখতে যেমন মোটাসোটা নাদুসনুদুস, এর পুষ্টিগুণও তেমনি ব্যাপক। আসলে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ভিটামিনের একটি ভান্ডার এই কুমড়া। এসব গুণাগুণের কথা না জেনেই তরকারি হিসেবে কুমড়া অনেকেরই পছন্দ। আর এই সবজির গুণের তালিকা জানা থাকলে পছন্দের মাত্রা নিশ্চয় আরও বেড়ে যাবে।
এই সবজিতে এক ধরনের তেল থাকে, যা পুরুষের প্রোস্টেটের কার্যক্ষমতা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এটি রান্না বা ভাজি করার সময় যে তেল বের হয় বা জমে সেটিও একই কাজ দেয়। মিষ্টি কুমড়ার বীজ, খোসা বা বাইরের আবরণও মোটেই ফেলনা নয়। বীজ শুকিয়ে ভেজে খাওয়া যায়। এতেও রয়েছে প্রচুর পুষ্টি যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এই সবজির খোস বা বাইরের আচরণ ভাল করে ধুয়ে অল্প পানিতে হালকা আগুনে সেদ্ধ করে নরম করে তাতে পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, সরিষার তেল আর লবণ মিশিয়ে চটকালে যে ভর্তা তৈরি হয় তা ভাত ও রুটি দিয়ে খাওয়া যায় অনায়াসে।
খাদ্যতালিকায় নিয়মিত মিষ্টি কুমড়ার উপস্থিতি আপনাকে রাখবে অনেক অসুখ-বিসুখ থেকে দূরে। কেননা মিষ্টি কুমড়া এমন একটি সবজি, যার রয়েছে নানাবিধ পুষ্টিগুণ।
১) মিষ্টি কুমড়াতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ। বিটাক্যারোটিন সমৃদ্ধ এই সবজিটি তাই চোখের জন্য খুবই ভালো। বয়সজনিত রোগ বিশেষ করে রেটিনার বিভিন্ন অসুখ প্রতিরোধে মিষ্টি কুমড়া বিশেষ ভূমিকা পালন করে। শুধু চোখের অসুখ নয়, ভিটামিন এ-এর অভাবজনিত অন্যান্য রোগেও মিষ্টি কুমড়া উপকারী।
২) গাজরের তুলনায় মিষ্টি কুমড়াতে রয়েছে অধিক পরিমাণে বিটাক্যারোটিন। গাজরে যেখানে ১৩ মিলিগ্রাম বিটাক্যারোটিন থাকে, মিষ্টি কুমড়াতে থাকে ৩৩ মিলিগ্রাম বিটাক্যারোটিন। বিটাক্যারোটিন এক ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। শরীরের ফ্রি রেডিকাল ড্যামেজ প্রতিরোধে মিষ্টি কুমড়া ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন দূষণ, স্ট্রেস ও খাবারে যে সব কেমিক্যাল ও ক্ষতিকর উপাদান থাকে সেগুলোর কারণে ফ্রি রেডিকাল ড্যামেজ হতে শুরু করে। ফ্রি রেডিকাল ড্যামেজের ফলে শরীরের ভালো কোষগুলো নষ্ট হতে শুরু করে এবং খারাপ কোষের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। সবুজ, কমলা, হলুদ রঙের সবজিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি পরিমাণে থাকে। তাই মিষ্টি কুমড়া ফ্রি রেডিকাল ড্যামেজ প্রতিরোধ করতে পারে।
৩) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ মিষ্টি কুমড়া ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোলেস্টেরল কম রাখতে সাহায্য করে। আর্টারির দেয়ালে চর্বির স্তর জমতে বাধা দেয়। ফলে মিষ্টি কুমড়া নিয়মিত খেলে হৃদরোগ প্রতিরোধ করা যায়।
৪) মিষ্টি কুমড়াতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলে সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা লাগা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। মিষ্টি কুমড়ার ভিটামিন এ ও সি চুল ও ত্বক ভালো রাখে। তাই চকচকে উজ্জ্বল চুল ও সুন্দর ত্বকের জন্য নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খেতে পারেন।
৫)মিষ্টি কুমড়াতে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম। তাছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম যা হাইপারটেনশন এবং হৃদরোগ দূরে রাখে। এছাড়া মিষ্টি কুমড়ার বিভিন্ন উপাদান ইউরিনেশনের সমস্যা কমায় ও কিডনিতে পাথর হতে বাধা দেয়।
৬)মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকায় তা সহজেই হজম হয়। হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে মিষ্টি কুমড়ার জুড়ি নেই।
৭)মিষ্টি কুমড়াতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিংক ও আলফা হাইড্রোক্সাইড। জিংক ইমিউনিটি সিস্টেম ভালো রাখে ও অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়া বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করতেও মিষ্টি কুমড়া সাহায্য করে।
মেয়েদের সবচেয়ে বড় বন্ধু হতে পারে কুমড়া। কারণ স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ ক্ষমতা ও হাড়ের জোর বাড়ানো থেকে শরীরে ভিটামিনের সঠিক জোগান-সবই মেলে কুমড়া থেকে।
এছাড়াও রক্তের চাপ কমাতে, শিরা, পেশি, স্নায়ু ও হাড়কে সতেজ রাখতেও কুমড়ার জুড়ি মেলা ভার। হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে কুমড়া অতি প্রয়োজনীয় সবজি।
Comments 5