ছাদ বাগানে জামরুল চাষ
জাত বাছাই দেশী জামরুল:
ফল আকারে ছোট, স্বাদে পানসে। তবে ফল ঝরে কম। দেশী জাতের জামরুলের বেশ কয়েক রঙের জামরুল দেখা যায়। লাল, গোলাপি, গোলাপি সবুজ ইত্যাদি রঙে দেশী জামরুলের কয়েকটি রকম আছে। গাছ বড় হওয়ায় ছাদে না লাগানোই ভালো।
থাই জামরুল:
থাই ভাষায় ছেম ফু পা, ফিলিপাইনে টামবিস, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় জামবু এয়ার নামের জামরুল বাংলাদেশে এসে হয়েছে থাই জামরুল। এ দেশে এখন কয়েক জাতের থাই জামরুল দেখা যাচ্ছে। এক জাতের থাই জামরুলের রঙ মোমের মতো সাদা, কিন্ত মুখের কাছে গোলাপি আভা। অন্য এক জাতের থাই জামরুলের রঙ সবুজাভ সাদা, অন্যটির রঙ দুধের মতো সাদা। আবার আরেক জাত আছে যেটার ফলের ওপর সাদা লম্বালম্বিভাবে গোলাপি আঁচড় আছে। আবার বড় লাল ফলও রয়েছে থাই জামরুলের। আছে ছোট থেকে বড় বিভিন্ন আকার। লাল রঙের থাই জামরুলের আকার তুলনামূলকভাবে ছোট। তবে সব জাতের সেরা বড় আকারে সাদা রঙের মিষ্টি থাই জামরুল। দশটিতে কেজি হয়। স্বাদে বেশ রসাল, নরম। গ্রীষ্মের প্রথম থেকে ফল ধরতে শুরু কর্ বর্ষাতেও ফল ধরে। বছরে দু-তিন দফায় ফল ধরে। তবে বর্ষার জামরুলের স্বাদ কম হয়। ফল গাছে বেশি পাকলে স্বাদ কমে যায়, চেহারা নষ্ট হয়ে যায় ও পচতে শুরু করে। বেশি বৃষ্টিতেও থাই জামরুলের ক্ষতি হয়।
রোজ অ্যাপেল:
থাই জামরুলের মধ্যে ‘রোজ আপেল’ সেরা। বছরে দু’বার ফল ধরে। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে একবার, এপ্রিল-মে মাসে আরেকবার। ফল আকারে খুব বড়। পাঁচ-ছ’টা জামরুলে এক কেজি হয়। ভেতরে পুরোটাই শাঁস। অত্যধিক মিষ্টি, শাঁসে চিনি বা সুগারের পরিমাণ প্রায় ২৫%। রঙ টকটকে লাল। অন্য জামরুল যেমন পাকার পর পরই গাছ থেকে ঝরে পড়ে, এটা তেমন নয়।
আপেল জামরুল (বারি জামরুল ১):
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত এ জাতটির গাছে নিয়মিত প্রতি বছর ফল ধরে। এ জাতের পাকা ফল দেখতে আকর্ষণীয়। ফলের রঙ মেরুণ বলে অনেকে একে আপেল জামরুল নামেও ডাকেন। খেতে সুস্বাদু, মধ্যম রসালো। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফুল আসে এবং এপ্রিল-মে মাসে ফল পাকে। ফল বড়, প্রতিটি ফলের ওজন ৩৫ গ্রাম। এ জাতটি ছাদে ড্রামে লাগানোর জন্য বাছাই করতে পারেন।
চাষ পদ্ধতি:
আধুনিক জাতের জামরুলের গাছ হয় ঝোঁপালো ও খাটো। তাই এসব জাতের গাছ ছাদে হাফ ড্রামে লাগানো যেতে পারে। তবে বাড়ির আঙিনায় জায়গা থাকলে টব বা ড্রামের চেয়ে মাটিতে লাগানো ভালো। হাফ ড্রামে মে মাসের মধ্যেই দোঁয়াশ মাটি অর্ধেক ও অর্ধেক গোবর বা জৈব সার মিশিয়ে ভরতে হবে। সাথে প্রতিটি হাফ ড্রামে ১ কেজি কাঠের ছাই ও ৫০০ গ্রাম হাঁড়ের গুঁড়া, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ১৫০ গ্রাম এমওপি এবং ৫০ গ্রাম বোরণ সার মিশিয়ে দেবেন। তবে ড্রামের ওপরের কানা থেকে অন্তত দু ইঞ্চি খালি রেখে সারমাটি ভরবেন।
মাটিতে লাগানো গাছ বাড়ে বেশি। একাধিক কলম লাগালে একটি কলম থেকে অন্য কলমর দূরত্ব দিতে হবে ৩-৪ মিটার। তবে বাগান করতে চাইলে সব দিকে সমান দূরত্ব দিয়ে কলম লাগাতে হবে। জুন-জুলাই মাস কলম রোপণের মোক্ষম সময়। নির্দিষ্ট জায়গায় সব দিকে আধা মিটার মাপ দিয়ে গর্ত করতে হবে। গর্তের মাটির সাথে মিশাতে হবে গর্ত প্রতি ১৫ কেজি গোবর সার, ১ কেজি কাঠের ছাই ও ৫০০ গ্রাম হাঁড়ের গুঁড়া। গর্তের মাঝখানে কলম লাগিয়ে গোড়ার মাটি চেপে দিতে হবে। কাঠি পুঁতে ঠেস দিতে হবে। লাগানোর পর হালকা সেচ ও শুকানোর সময় সেচ দিতে হবে। ছোট গাছে ও ফলবান গাছে প্রতি বর্ষার আগে রাসায়নিক সার দিলে উপকার পাওয়া যায়। ফলবান প্রতিটি গাছে বছরে ১০ কেজি গোবর সারের সাথে ৫০০ গ্রাম সরিষার খৈল, ১ কেজি ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম এমওপি ও ৫০০ গ্রাম টিএসপি সার গোড়া থেকে একটু দূরে চার দিকের মাটি নিড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এসব ঝামেলা মনে হলে ছাদ বাগানে ড্রামের গাছে গাছ প্রতি ৪-৮টি ট্যাবলেট সার গাছের গোড়ার মাটিতে পুঁতে দিয়ে বছর ভর উপকার পেতে পারেন।
লেখক: মৃত্যুঞ্জয় রায়
Comments 0