কিছু অর্থবহ প্রশ্ন আর নির্ভেজাল উত্তর- এ দু'য়ে মিলে আপনার জীবনে ভিন্ন কিছু এনে দিতে পারে। আসতে পারে নতুন উপলব্ধি। খ্যাতিমান ফরাসী লেখক ও দর্শনিক ভলতেয়ার বলেছিলেন, 'মানুষকে তার উত্তর দিয়ে নয়, বরং সে কী প্রশ্ন করছে তা দিয়ে বিচার কর'। মানুষের জ্ঞানের গভীরতা বা অভাব দুটোই প্রকাশ পেতে পারে তার প্রশ্নে। প্রয়োজনীয় একটিমাত্র প্রশ্নই অনেক অজানা-অর্থবহ কিছু বের করে আনতে পারে। প্রখ্যাত আমেরিকান জ্যোর্তিবিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক কার্ল সাগান এই প্রশ্ন-উত্তরের মাহাত্ম্য নিয়ে বলেছেন, 'প্রশ্নের সাহসীকতা আর উত্তরের গভীরতা দিয়ে আমরা আমাদের জগতকে অর্থবহ করে তুলি'।
ফোর্বস এমনই বেশ কয়েকটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে আপনাদের প্রতি। খাঁটি সত্য থেকে নিজেই উত্তরগুলো ছেঁকে তুলুন। নিজেকে হয়তো আবার নতুন করে চিনতে পারবেন আপনি। পরিশুদ্ধ হয়ে শুরু হতে পারে অন্যরকম আনকোরা একটি জীবন।
১. নিজের সম্পর্কে কোন কোন বিষয়গুলি আপনি জানতে চান না বা এড়িয়ে যান?- এ প্রশ্নের উত্তরই সম্ভবত আপনার জন্যে সবচেয়ে কঠিন ও বাস্তব সত্যগুলো উঠিয়ে আনতে পারে। সত্যিকার অর্থে আপনার স্বভার-চরিত্র-চাওয়া-পাওয়া কী এবং কেমন তার উত্তর যদি নিজেই বের করে আনতে পারেন, তাহলে আপনি অন্তত নিজের সাথে প্রতারণা করার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন।
২. যা আপনার করা উচিৎ বলে মনে করেন, তা এড়িয়ে যান কেনো?- শুধু কাজের তালিকা করে বসে থাকবেন না। বরং যা করতে হবেই তা করে ফেলুন।
৩. জীবনের কোন বিষয়গুলো আপনার কাছে মূল্যবান এবং এগুলোর প্রতি আপনি কি সৎ?- আপনার পরিবার, বন্ধু-স্বজন, কর্মক্ষেত্র, ধর্মসহ সকল ক্ষেত্রে যে ব্যাপারগুলো আপনার কাছে সবচে' বেশি মূল্য বহন করে সেগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার হউন। এই বিষয়গুলোতে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করলে অশান্তি জন্ম নেয়।
৪. আশপাশের মানুষেরা আপনার সম্পর্কে কী কী ধারণা রাখেন যা আপনি জানেন না?- মনে রাখবেন, মানুষ আপনার সম্পর্কে যা ধারণা করে তাই আপনার জন্যে বাস্তবতা। ভাল বা খারাপ যাই হোক না কেনো, আপনাকে নিয়ে মানুষের চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে জানুন।
৫. আপনি কী কী জানেন না, তা কি আপনি জানেন?- অজানা ব্যাপারগুলো জানতে চাইলে আপনি নিজের অজ্ঞতা সম্পর্কে সজাগ হয়ে উঠবেন। এজন্য প্রয়োজনে কাছের মানুষের সাহায্য নিন। আপনি কোনো বিষয়ে কী জানেন না বা বোঝেন না, তা কাছের মানুষেরাই ভাল বলতে পারবেন।
৬. কোনো কিছু যেভাবে পাওয়া আপনার জন্যে সুখকর হয়, সেভাবেই তা আসে কি?- মানুষের ইগো তার আবেগের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নাও হতে পারে। আপনার আবেগের সাথে বিরোধপূর্ণ হয় এমন কিছু না চাইলে, আপনি যেমনভাবে চান, তেমনটিই সবসময় পাবেন।
৭. জীবনের সব চাওয়াগুলো পাওয়া হয়ে গেলে আপনার অনুভূতি কেমন হবে?- যেকোনো কাজে বা লক্ষ্যে সফল হলে পরিতৃপ্তির বিষয়টি কিছুটা সময়ক্ষেপণ করে আসাটাই ভাল। এতে সাফল্যের শতভাগ স্বাদ পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা সাধারণত মুহূর্তের পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিকভাবে আবেগতাড়িত হয়ে পড়ি। ফলে পরের কাজে এ আবেগ উল্টো প্রভাব ফেলতে পারে। কতখানি সফল হলে কতটুকু তৃপ্ত হওয়া উচিৎ, সে সম্পর্কে ধারণা থাকলে আপনার অতৃপ্তি থাকবে না।
৮. আজ আমি কী শিখেছি? কী পছন্দ করেছি? আমাকে কী আনন্দ দিয়েছে?- প্রতিটি দিনের শেষে এই তিনটি জিজ্ঞাসার জবাব খুঁজুন। যদি দিনটিতে নতুন কিছু শিখে থাকেন, পছন্দের মানুষ বা নতুন কিছু যদি পেয়ে যান এবং কোনো কারণে যদি আপনি প্রাণ খুলে হাসতে পারেন, তবে নিঃন্দেহে দিনটি আপনার স্মরণীয় হতে পারে।
৯. আপনি যদি ভয় না পেতেন, তবে কী করতেন?- ধরে নিন আপনি এক শ বছর বাঁচবেন। এবার অতীতে হারিয়ে যান। এতদিন যেভাবে জীবন চলেছে তা ধারাবাহিক চলতে থাকলে জীবনের বাকি সময়ের চিত্র কেমন হতে পারে- তা ভেবে বের করুন। তারপর সিদ্ধান্ত নিন, ভবিষ্যত যেমনটি চান তেমনটি পেতে হলে এখন কী কী করতে হবে।
১০. আপনি একসময় এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন, এ নিয়ে কি আপনি ভীত?- মানুষ মরণশীল বলে জীবনের কোনো কিছুকে মূল্যহীন ভাবার কারণ নেই। এটা ভাবুন, এই যে বেঁচে আছি তা কতো আনন্দময়।
১১. আজ এবং আগামীকাল- এ দুটোকে কী আপনার গুরুত্ব দিতে হবে?- বর্তমানকে ধারণ করুন। তবে ভবিষ্যতের কথা ভুলে যাবেন না। খুব চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কোন সময়টা উপভোগ করতে হবে বনাম ভবিষ্যত ফসলের জন্যে কোন সময়টাতে বীজ লাগাতে হবে- জীবন হচ্ছে এ দু'য়ের সমন্বয়।
১২. কেনো নয় এবং কি হতে পারে?- কোনো বিষয়কে একেবারে গতানুগতিকভাবে দেখার কিছু নেই। বরং আপনার প্রশ্নটি হবে, কেনো এ কাজটা করা যাবে না? এ প্রশ্নগুলোর সমন্বয়ে নেতিবাচক উত্তর থেকেও সম্ভাবনা বেরিয়ে আসবে।
১৩. আজ কারো জন্যে বা অন্যভাবে ভাল কিছু করেছেন কি?- এ প্রশ্নের উত্তর অপরের কাছে আপনার মূল্যায়ন তুলে ধরবে। নিজেকে যেভাবে মূলায়ন করেন, আপনার কাজের জন্যে তার থেকেও বেশি কিছু পেতে পারেন।
১৪. আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে নিজের জীবনকে কীভাবে দেখতে চান?- লুইস ক্যারোল বলেছিলেন, 'যদি না জানা থাকে কোথায় যেতে হবে, তবে সেখানে কখনই যেতে পারবে না'। আগামী পাঁচ বছরের টার্গেট ঠিক করে ফেলুন। এগুলো যেমন অদূর ভবিষ্যতে অর্জন করতে হবে, তেমনি আবার যথেষ্ট সময়ও রয়েছে আপনার হাতে।
১৫. আজকের দিনটিকে শুভ করতে কী করতে পারেন?- সংগতিপূর্ণ কাজের ধারাবাহিকতাই সাফল্যের শ্রেষ্ঠ রহস্য।
১৬. আপনার 'কেনো' প্রশ্নটি কী প্রসঙ্গে করছেন?- যেকোনো বিষয়ে যদি শুধু কেনো কেনো করেন, তাহলে 'কি' এবং 'কিভাবে' নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হবে। করার 'উপায়' না থাকলে আপনার কাজিটি 'কি' এবং 'কিভাবে' দিয়েই বাধাগ্রস্ত হবে।
১৭. আজ বা এ সপ্তাহে বা এ মাসের কোন কাজটি আপনার সবচেয়ে জরুরি?- এ কাজটি খুঁজে বের করুন। সব কাজের ফাঁকে এ কাজটিকে বেশি গুরুত্ব দিন।
১৮. যেকোনো কাজের ফলাফল কী, এজন্য কী কী করতে হবে, এর সফলতা কী?- এ প্রশ্নগুলোর উত্তর বের করুন। সফলতা, সম্ভাবনা এবং মূল্য বেরিয়ে আসবে।
১৯. আমরা কী নিয়ে কথা বলছি বা কী সমস্যা সমাধান করতে হবে?- মূল সমস্যাটি বের হয়ে আসলে সমাধানের পথগুলোর সহজে দেখা মিলবে। ফলে অযথা অপ্রয়োজনীয় বিষয় আলোচনায় এসে সময় অপচয় করবে না।
২০. আপনি কাজটি কি এখনই করতে পারবেন?- যদি গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ এখন করা সম্ভব হয়, তাহলে এখুনিই করে ফেলুন।
২১. নির্দিষ্ট কিছু একটা ঘটাতে কী দরকার?- এ প্রশ্নের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনে দায়িত্বশীলতা চলে আসে। প্রয়োজনীয় উৎসগুলো কাজে লাগাতে দায়-দায়িত্ব ভাগ করে নেয়া যায়।
২২. যদি আমরা কাজটি যাদু দিয়ে করতে পারতাম তাহলে বিষয়টি কেমন হতো?- এর উত্তরে সীমাবদ্ধতাগুলো চিহ্নিত হয়। পাশাপাশি নতুন উপায় বেরিয়ে আসে।
২৩. আপনার আদর্শ চরিত্রগুলো কিভাবে জীবন ধারণ করেন?- যাকে আদর্শ বলে মনে করেন, তার গুণাবলী কাজে প্রয়োগ করার চেষ্টা করুন। একেবারে থেমে থাকার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
২৪. আমরা কখন দেখা করতে পারি?- যে কাজেই হোক, কারো সাথে দেখা করার বিষয়টি এড়িয়ে যাবেন না। কখন কার কাছ থেকে কী বেরিয়ে আসবে, তা আপনি সংশ্লিষ্ট মানুষটির সাথে না দেখা করলে বুঝতে পারবেন না।
২৫. আমাকে একটা পরামর্শ দেবেন?- এ প্রশ্নটি আপনার প্রতি কারো নেতিবাচক মনোভাবকে দুর্বল করে দিবে। পরামর্শ চাইলে যে কেউ আপনার প্রতি ইতিবাচক হয়ে উঠবেন।
২৬. একবছর একসাথে কাজ করার পর আমি আপনার সম্পর্কে কী ধারণা করতে পারি?- এ প্রশ্নটি গেট সেটিসফ্যাকসনের ওয়েনডি লিয়া করেছিলেন এক চাকরীপ্রার্থীকে। খুব কার্যকর একটি প্রশ্ন হতে পারে। এ প্রশ্নের দ্বারা নিজের সর্বোচ্চ গুণটির পরিচয় পেতে পারেন।
২৭. কী কী কারণে কোনো একটি বিষয় আপনার আগ্রহ কাড়বে?- পণ্যের প্রসারে প্রশ্নটি ব্যাপক কাজে লাগে। তাছাড়া মানুষের চাহিদা বা পছন্দ-অপছন্দের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর উপায় পাবেন এ প্রশ্নে।
২৮. আর কিছু?- দু' শব্দের এ প্রশ্নের উত্তর বিশাল কিছুর খোঁজ দিতে পারে। একেবারে সূক্ষ্ম বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে যদি এ প্রশ্নের উত্তরে কিছু বের করে আনতে পারেন।
Comments 1