Home  • Story, Tales & Poem • Fiction

তাজুলের স্বপ্ন-ভঙ্গ

আরিফ মজুমদার ৩০ এপ্রিল ২০১৪ ১৭:০৩:০০ পিএম বুধবার গল্প / শিল্প-সাহিত্য বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ৩০-এপ্রিল-২০১৪-১৭০৩০০-পিএম বিশালাকৃতির বাড়িটার দিকে তাকালে তাজুলের মনটা গর্বে ভরে যায়। বাড়ির মালিক সাবেক মন্ত্রী মহোদয়— তাজুল নিজে নয়। মন্ত্রী মহোদয় বড় শখ করে বাড়ির নাম দিয়েছেন ‘স্বপ্ন-মহল’। হয়তো বা মন্ত্রী মহোদয়ের অনেক দিনের স্বপ্নের বাস্তবায়ন এই বাড়ি। তাতে কী! বাড়ি নির্মাণে তাজুলের অবদান কম কিসে! আর কেউ জানুক বা না-জানুক তাজুল নিজে তা জানে। তাই তো বাড়িটার প্রতি তার এক সাগর মায়া। পাশে বশিরের চায়ের দোকানে বেঞ্চির এককোণে বসে সকাল-বিকেল তাজুল বাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকে। কারো সাথে কোনো কথা বলতে অনিচ্ছুক তাজুল শুধু বিড়বিড় করে যায়। আজকাল বড় মনমরা লাগে তার। যে কেউ দেখলে তাজুলকে উন্মাদ ভাবতে পারে। নিজের প্রতি অযত্নে তাজুলের মুখভর্তি অগোছালো দাঁড়ি। গায়ের পোশাক অপরিষ্কার। তাজুলের বয়স পঁয়ত্রিশের মতো হবে। এই বয়সেই তাজুল বড় একা। অলি-গলিতে ঘুরে-ঘুরে তাজুলের দিন কাটে। চলা-ফেরায় অনেক কষ্ট তার। ভেঙে যাওয়া বাঁ পায়ে শক্তি পায় না। হাঁটতে হয় লাঠি ভর করে। খাদ্য জোটে অন্যের দয়ায়। গত সাতদিন সর্দিজ্বরে ভুগছে তাজুল। গত কয়েক মাসেও যে চাদরে একবারের জন্যও পানির স্পর্শ লাগেনি সে চাদরটা গায়ে জড়িয়ে খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে হেঁটে সকাল-সকাল বশিরের চায়ের দোকানের এককোণে এসে বসলো তাজুল। বসেই তার অভ্যেস মতো বাড়িটার দিকে তাকালো। বাড়িটার প্রতি তার অকৃত্রিম মমতা। মাঝে-মধ্যে বাড়ির দিকে তাকালে তার দু’চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠে তাজুল। বাড়ির নির্মাণ কাজ চলছে তখন, মন্ত্রী মহোদয়ের শ্যালক ইয়াং বয়সী তমাল নামের এক সুদর্শন ইজ্ঞিনিয়ারের তত্ত্বাবধানে। তমাল সাহেব সারাদিন সাইটে থাকতে পারেন না। শ্রমিকদের মধ্যে তাজুলকেই তাঁর বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়। প্রতিদিন সাকালে এসে তমাল সাহেব তাজুলকে সারাদিনের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে চলে যান। তারপর শতাধিক শ্রমিক নিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়ার দায়িত্বতা তাজুলকেই সামলাতে হয়। তাজুল বিরক্ত হয় না এতে, বরং উৎসাহ পায়। কাজেকর্মে সারাদিন তাজুল নিজে যে খুব ব্যাস্ত থাকে তা না, বরং অন্য শ্রমিকদের ব্যস্ত রাখাটাই তার মূল ব্যস্ততা হয়ে ওঠে। যেন তাজুলের টাকাতেই নির্মিত হচ্ছে এই বাড়ি, তাজুলের নিজের বাড়ি। সাইটের পাশেই নিম্নবিত্তদের আবাসিক এলাকায় মাসিক হাজার টাকা বাড়ায় টিনশেড ঘরে বউ-ছেলেকে নিয়ে থাকে তাজুল। ছেলের বয়স ছয়-সাত হবে। নাম জুয়েল রানা। ছেলেকে আদর করে জুবু ডাকে তাজুল। কাজের দায়িত্বভার সামলাতে গিয়ে বাসায় গিয়ে কয়েক মিনিটের জন্য দুপুরের খাবার খেয়ে আসার মতো সময়ও খুঁজে পায় না সে। তাজুলের স্ত্রী সুমাইয়া বানু টিফিন ক্যারিয়ারে করে নিয়মিত দুপুরের খাবার নিয়ে আসে সাইটে। খাবার আনা-নেওয়ার পথে মুদি দোকানদার মতি মিয়ার চোখে পড়তে হয় সুমাইয়া বানুকে। সুমাইয়াকে দেখলে মতি মিয়ার কণ্ঠে গানের সুর উঠতে থাকে। মতি মিয়া এদিক-সেদিক তাকিয়ে, কাছাকাছি দূরত্বে লোকজন না থাকলে সিনেমার গান ধরে। সুমাইয়া বানু চোখের দৃষ্ট অবনত করে দ্রুত পায়ে মতি মিয়ার দোকান পেরিয়ে যায়। মতি মিয়ার ব্যবহারে সুমাইয়া বানু মাঝে-মধ্যে নিজে না গিয়ে স্কুল ফেরা ছেলে জুয়েল রানাকে দিয়ে স্বামীর জন্য খাবার পাঠিয়ে ছেলেকে বলে দেয়, ‘তোর বাপরে কইস মায়ে ঘরের কাজে লাগছে। আইতে পারে নাই।’ খাবার সেরে তাজুল জুবুর হাতে দু’একটাকার নোট ধরিয়ে দিতে ভুল করে না। জুলের-রানা টাকা পেলে খুশিতে একখানা হাসি দিয়ে সোঁজা চলে যায় মতি চাচার দোকানে। চকলেট খাবে। চকলেটের সাথে মতি মিয়া দু’চারটা তেঁতুলের চাটনি জুয়েল রানার হাতে ধরিয়ে দিয়ে অন্য সুযোগ খোঁজে। জুয়েল রানাকে বলে, ‘তোর মার লাইগা লইয়া যা। কইস মতি চাচা দিছে। টেকাটা ফেরৎ ল। চকলেটের সাথে চাটনি তারপরে ফেরৎ টাকা, এ তিন প্রাপ্তিতে জুয়েল রানা খুশিতে নেচে-নেচে ঘরে ফিরলেও রাগে সুমাইয়া বানুর গা জ্বলে যায়। ছেলের হাতের চকলেট-চাটনি কেঁড়ে নিয়ে ময়লায় ছুঁড়ে জুবুর গালে থাপ্পড় মেরে বলে‘ তোরে কইসি না কারোর কিছু হাতে লবি না। মনে রাখস না কা! বাপের লাহান হাবলা হইছস! মুলা দেইখ্যা গাঁধার লাহান লোভের পিছনে লাগস!’ মায়ের রাগী আঘাতে জুয়েল রানা গাল ফুঁলিয়ে বসে কাঁদে। ছেলের দিকে তাকিয়ে সুমাইয়া বানু আপাত্য স্নেহে কাতর হয়ে পড়ে। অগত্যা কাছাকাছি মতি মিয়ার দোকানের দিকেই এগিয়ে যেতে হয় ছেলেকে চকলেট কিনে দেওয়ার তাগিদে। সুমাইয়া বানুকে দোকানে পেলে মতির মনে বড় সুখ লাগে। মতি মিয়া আগ্রহ নিয়ে প্রণাম করে বলে ‘কী লাগবো ভাবি ছাহেব কহেন’। মতি সুমাইয়া বানুর হাতের তালু ঘেঁষে চকলেট দিয়ে বলে ‘আরে ভাবি-ছাব টাকা দিতাছেন ক্যা? আমি আপনার দেওর না? যান-যান টাকা রাখুম না। আপনা মাইষের থাইকা টাকা লইতে শরম লাগে। আবার আছবেন। শাদি-শুদা করি নাই। আপনারে দেখলে মনটায় বড় আমোদ লাগে’। কথা শেষে মতি মিয়া দুগাল ভরে হাসে। সুমাইয়া বানু জোর করেই টাকাটা রেখে চকলেট হাতে করে চুপচাপ চলে আসে। নির্মাণ কাজে তাজুল আজকাল ভীষণ উৎসাহ পাচ্ছে। রাতে ঘুমোতে গিয়ে সুমাইয়া বানুর গায়ে হাত রেখে জানায় ‘মন্ত্রী মহোদয় আমার কাজে বিরাট খুশি। তমাল সাহেব কইছে বাড়ি তৈয়ার শেষে মন্ত্রী ছাহেব নাকি আমারে এই বাড়িতে দারোয়ানির চাকরি দিবেন। তোরে নিইয়্যা থাকার লাইগ্যা ছোট একখানা রুমও দিবেন। বউ কথা কস না কা? আমার কথা শুনতাস না?’ সুমাইয়া বানু স্বামীর বিপরীত মুখে শুয়ে মিটিমিটি হেসে বলে ‘আগে হউক পরে বলুম। রাইত অনেক হইছে। এহন চোখ বুজেন’। স্ত্রীর কথায় তাজুলের চোখে ঘুম আসে না। তাজুল মনে মনে ভাবে মন্ত্রী মহোদয়ের বাড়িতে দারোয়ানির চাকরি কম কথা না! আবার এই রাজকীয় বাড়িতেই বউ-ছেলেটা নিয়ে সে রাত কাটাবে। এর চেয়ে বিরাট স্বপ্ন তাজুলের মতো মুর্খ-সুর্খ মানুষের জীবনে আর কী হতে পারে! তাজুলের চোখের সামনেই তো একদিন বাড়িটা গড়ে উঠবে। মন্ত্রী মহোদয়ের বাড়ি তাই নামি-দামি লোকজনের যাওয়া-আসা হবে। তাজুল নিজের চক্ষে তাদের দেখবে। বলা যায় না দেশের প্রধানমন্ত্রীও একদিন মন্ত্রী মহোদয়ের নিমন্ত্রণে এই বাড়িতে চলে আসতে পারেন! তখন তাজুল গেইটে দাঁড়িয়ে সামানা-সামনি প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানাবেন! সুখী ভবিষ্যতের কথা ভাবতে ভাবতে মনটা আনন্দে ধেঁ-ধেঁ করে ওঠে তাজুলের। বউটাকে জড়িয়ে ধরে তাজুলের রাত কেটে যায়। ইতোমধ্যে বাড়ির তৃতীয় তলায় কাজ শুরু হয়ে গেছে। তাজুল ঘুরে-ঘুরে শ্রমিকদের কাজের তদারকি করছে। তৃষ্ণার্ত শ্রমিকদের নিজ হাতে গ্রাস ভরে ভরে পানি খাওয়াচ্ছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই দুপুরে খাবারের জন্য কাজে বিরতি পড়বে। হঠাৎ ট্র্যাফিক পুলিশের অক্লান্ত বাঁশির শব্দে রাস্তায় লোকজনের হৈ-চৈ পড়ে গেল। শ্রমিকরা কাজ রেখে মাথা তুলে রাস্তার দিকে ঘাড় ফেরালো। যানবাহন সব দাঁড়িয়ে পথ বন্ধ করে রেখেছে। মনে হচ্ছে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাজুল সিঁড়ি ভেঙে তড়িঘড়ি করে নেমে লোকজনের ভীড়ের দিকে এগিয়ে গেল। সাথে সাথে অন্যান্য শ্রমিকরা, পথিকরা এসেও ভীড় জমাচ্ছে। রাস্তা পার হতে গিয়ে যাত্রীবাহী বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে রক্তাক্ত অসস্থায় পড়ে আছে পাঁচ-ছয় বয়সী একটি শিশুর বিকৃত লাশ। তাজুল ভীড় ঠেলে আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে দেখে লাশের পাশে রক্তে মাখামাখি হয়ে ভাত-তরকারির সাথে পড়ে আছে প্রতিদিনকার টিফিন ক্যারিয়ারটি। তাজুল কী বুঝতে পেরে ‘জুবু.. জুবু’ চিৎকারে লাশের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। সড়ক দুর্ঘটনায় আদরের ছেলেকে হারিয়ে তাজুলের সংসারে ক্লান্তি নেমে আসে। তার স্ত্রী সুমাইয় বানু তিনদিন যাবত বিছানায় শুয়ে কাঁদছে। ছেলের মৃত্যুশোকে তাজুলের মন ভীষণ অস্থির। কাজে যায় না। বশিরের চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসে তাজুল নির্মাণাধীন বাড়িটার দিকে তাকিয়ে আনমনে বিড়ি টানছে। তাজুলের দু’গাল বেয়ে চোখের পানি। বশির কী মনে করে দোকান থেকে নেমে এসে তাজুলের কাঁধে হাত রাখে। তাজুল বশিরের দিকে কিছুক্ষণ অসহায় চোখে তাকিয়ে হাতের বিড়ি ফেলে বশিরকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। বশির তাজুলকে বুকে টেনে নেয়। তাজুলের কান্নায় কাঁদতে হলো বশিরকেও। এদিকে তাজুলের অনুপস্থিতে তমাল সাহেব শ্রমিক সামলে কাজ চালানোয় ঝামেলা বোধ করলেন। তিনি বাড়িতে এসেও তাজুলকে পেলেন না। সুমাইয়া বানুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। জবাব মেলেনি। তমাল সাহেব অনেক খোঁজাখুঁজি করে বশিরের চায়ের দোকানে তাজুলকে দেখতে পেলেন। তমাল সাহেবকে দেখে ‘স্যার গো..স্যার’ বলে তাজুল মাথা নিচু করে কাঁদতে শুরু করলো। তাজুলের মাথায় সান্ত্বনার হাত রেখে পাঁচশ’ টাকার কয়েকটা নোট তাজুলের পকেটে ভরে দিয়ে তাকে কাজে যেতে জোর অনুরোধ করলেন তমাল সাহেব। তাজুল আগের মতোই সকাল-সকাল কাজে যাওয়া শুরু করেছে। তবে মনটা ভীষণ আনচান-আনচান। হঠাৎ-হঠৎ রাস্তার ওখানটায় নজর পড়লে শোকাতুর হয়ে পড়ে সে। জুবুর লাশ যেন দেখতে পায় সেখানে। ছেলের রক্তাক্ত লাশ তার চোখের পর্দায় ভেসে ওঠে। তখনই তাজুল উন্মাদের মতে নির্মাণাধীন খুঁটি কিবা এটা-সেটার সাথে ধাক্কা খায়। চোখ মুছে স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করে। তাজুলের অক্লান্ত শ্রমের তাগিদে বাড়ির কাজ মোটামুটি শেষের পর্যায়ে। মন্ত্রী মহোদয়ও একদিন এসে ঘুরে গেলেন। তাজুল দৌড়াদোড়ি করে বশিরের চায়ের দোকান থেকে একটা চেয়ার এনে মন্ত্রী মহোদয়কে বসার জন্য এগিয়ে দিলো। মন্ত্রী মহোদয় তাজুলের প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে তামাল সাহেবকে কী একটা ইঙ্গিত দেন। সাথেসাথে তমাল সাহেব সেদিনের মতো পাঁচশ’ টাকার কয়েকটা টাটকা নোট তাজুলের পকেটে ভরে দেয়। তাজুল মন্ত্রী মহোদয়ের দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি দেয়। আজকাল মতি মিয়ার মুদি দোকানে সুমাইয়া বানুর কারণে-অকারণে ঘন-ঘন আসা-যাওয়া হয়। কাজেকর্মে ব্যস্ত থাকে তাজুল। বউয়ের চাওয়া-পাওয়ার দিকে সময় থাকে না তাজুলের। অন্যান্য দিনের মতো কাজ শেষে বশিরের চায়ের দোকানের আড্ডায় না বসে গায়ের ঘাম মুছতে-মুছতে মার্কেটের দিকে এগিয়ে যায় তাজুল। মন্ত্রী মহোদয়ের দেওয়া বখশিসের টাকা থেকে বউয়ের জন্য একটা লাল শাড়ি কিনে সন্ধার পর-পরই ঘরে ফিরে সুমাইয়া বানুকে ঘরে পায় না তাজুল। এদিক সেদিক তাকিয়ে ডাকাডাকি করে তাজুল দরজায় বসে বিড়ি টানছে। অবেলায় মতি মিয়ার দোকানের গলিটা দিয়ে সুমাইয়া বানুকে ঘরে আসতে দেখে তাজুলের মনে সন্দেহ জাগে। তাজুল হাতের বিড়ি ফেলে দিয়ে দরজায় দাঁড়ায়। সুমাইয়া বানু তাজুলের পাশ কেটে দাঁড়ায়। সুমাইয়া বানুর চোখে মুখে একটা অন্যায় ভাব আন্দাজ করতে পেরে তাজুল রেগে তার চুল টেনে ধরে রাগারাগি করে বলে ‘নইট্টা-মাগী গেছিলি কই? আঁন্ধার রাইতে আলতা-পালিশ মাইয়ার লাহান পাড়া চইড়া বেড়াস কার লাই?’ পরপর কয়েকটা চড়-থাপ্পড়। সুমাইয়া বানু মাটিতে বসে কাঁদতে শুরু করে। তাজুল ধেয়ে যায় মতি মিয়ার দোকানের দিকে, খানিক গিয়ে আবার ফিরে আসে। তাজুলকে আসতে দেখে দোকানের চাউনি বন্ধ করে রেখেছে মতি মিয়া। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই রাগি ভাব নিয়ে তাজুল ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। বশিরের চায়ের দোকানে এসে নাস্তা সেরে কাজে যোগ দেয়। গতরাতে বউয়ের গায়ে হাত তোলার পর থেকেই তাজুলের মনে একটা ঘেন্না-ঘেন্না রাগের উদ্ভব হয়েছে। সে রাগটা তার বউয়ের প্রতি নাকি মতি মিয়ার প্রতি তাজুল তা ভেবে পায় না। তমাল সাহেব এসে শ্রমিকের গত তিন দিনের টাকা তাজুলের হাতে বুঝিয়ে দিয়ে চলে যান। টাকা হাতে করে শ্রমিকদের কাছে যাওয়ার পথে সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় তৃতীয় তলায় একটুকরো কাঠে পা পিছলে নিচে পড়ে যায় তাজুল। কাজে নিয়েজিত অন্যান্য শ্রমিকরা ধরাধরি করে তাজুলকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যায়। কয়েকটা দিন তাজুলকে হাসপাতালেই থাকতে হয়। কিন্তু তার অনেক ভালোবাসার বউ তাকে একদিনও দেখতে আসে না। হাসপাতালের বেডে শুয়ে বউয়ের কথা ভেবে তাজুলের খারাপ লাগে। তমাল সাহেব একদিন এসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলে যান তাজুলের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার মন্ত্রী মহোদয় পরিশোধ করে দিবেন। ডাক্তারি চিকিৎসায় মাস খানেকের মধ্যে তাজুল শারীরিক সুস্থতা ফিরে পেলেও অকেজো হয়ে যায় তার বাঁ পা। পঙ্গু অবস্থায় ঘরে ফিরে বউকে আর খুঁজে পায় না সে। মতি মিয়া দোকান ছেড়ে কোথায় পালিয়েছে তাও কেউ জানে না। মন্ত্রী মহোদয় তাঁর ক্ষমতায় থাকা সময়ের মধ্যেই তড়িঘড়ি করে বাড়ির কাজ সেরে নিলেন। রং করে বাড়ির আঙিনায় দেশি-বেদেশি বেশ কয়েক জাতের ফুলের চারাও লাগালেন। কিছু দিনের মধ্যেই হয়তো মন্ত্রী মহোদয় নব নির্মিত এ বাড়িতে স্ব-পরিবারে এসে উঠবেন। বাড়ির ভেতর সেসবের কাজই চলছে। ইতোমধ্যে সরকারের পরিবর্তন ঘটে। সাবেক মন্ত্রী মহোদয়ের নামে দুদকের মামলা পড়েছে। সাবেক মন্ত্রী খেলার মাঠ দখল করে সরকারি ভূমিতে অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি নির্মাণ করার ফলে নগর উন্নয়নে বিঘ্ন ঘটেছে। মন্ত্রী মহোদয়ের বিরুদ্ধে হাইর্কোটে মামলা করা হয়েছে। শেষ বিকেলে তাজুল তার অভ্যেস মতো বশিরের চায়ের দোকানে বসে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে। বাড়ির গেইটে দারোয়ানি পোশাক পড়ে দাড়িয়ে আছে একুশ-বাইশ বয়সী একটি ফর্সা ছেলে। এই বাড়ির দারোয়ানির পোশাক পড়ার স্বপ্ন দেখেছিল তাজুল। কিন্তু তার মতো পঙ্গুকে মন্ত্রী মহোদয় কোন যুক্তিতে তাঁর ‘স্বপ্ন-মহলে’ দারোয়ানির চাকরি দিবেন! তাজুল নিজেও তা জানে। তাই তো কখনোই সে মন্ত্রীর কাছে তো দুরের কথা ওই বাড়িটির কাছাকাছিও যায় না। শুধু বশিরের চায়ের দোকানে বসে দূর থেকে প্রতি দিন সকাল-বিকাল বাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকে। এই বাড়িতে দারোয়ানির চাকরি না পেলেও হঠাৎ-হঠাৎ তাজুল স্বপ্ন দেখে, দারোয়ানের পোশাক গায়ে জড়িয়ে যেন সে নিজেই গেইটে দাঁড়িয়ে আছে। অপরিচিত কেউ এলেই শুদ্ধ ভাষায় বলছে ‘এক্সকিউজ মি, কে আপনি? আপনার পরিচয়?’ বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০,

Comments 5


এটা কি সংগ্রহকৃত নাকি লিখিত নাকি টাইপিংকৃত?
ভাল লেগেছে, এগিয়ে যান, শুভ কামনা!
A very heart touching superb short story.............carry on bro, we want more such type of short story.
Everyone saying you are a good writer after reading your story. Thanks again

Share

About Author
ARIF  MUJUMDER
Copyright © 2024. Powered by Intellect Software Ltd