বাণিজ্য বিভাগে এইচএসসি পাস তিনিই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক!কোনো ক্লাস বা পড়ালেখা না করেই মিলেছে এমবিবিএস পাসের সনদ।
মানবিক বিভাগে এসএসসি ও বাণিজ্য বিভাগে এইচএসসি পাস করেছেন। এরপর কোনো ক্লাস বা পড়ালেখা না করেই মিলেছে এমবিবিএস পাসের সনদ। যে হাসপাতালে ইন্টার্নি করেছেন বলে দাবি, তার কোনো অস্তিত্বই নেই! সনদদাতা প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিরও নেই চিকিৎসা শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর অনুমতি। তার পরও তিনি শিশু ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে চালিয়ে যাচ্ছিলেন চিকিৎসা কার্যক্রম। আবদুল কাইয়ুম নামে কথিত এ চিকিৎসককে গতকাল সোমবার দু'বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া তাকে এবং মোখলেছুর রহমান নামে তার এক সহকারীকে এক লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। বাণিজ্য বিভাগে এইচএসসি পাস তিনিই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক!
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এইচএম আনোয়ার পাশা সমকালকে জানান, আবদুল কাইয়ুম চিকিৎসক সেজে পশ্চিম রামপুরার উলন রোডের ৩৩৪/৩ নম্বর ভবনের হিরোসাকি ফার্মেসিতে রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে আসছিলেন। গোপন খবরের ভিত্তিতে গতকাল সকালে সেখানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানটি পরিচালনা করেন র্যাব-৩-এর মেজর কামরান কবির উদ্দিন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিনিধি ডা. স্বপন কুমার তপাদার অভিযানে উপস্থিত ছিলেন। আবদুল কাইয়ুম দাবি করেন, তিনি প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি এমবিবিএস কোর্স করে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল থেকে এক বছরের ইন্টার্নি করেন। তিনি এ সংক্রান্ত সনদও দেখান। তবে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন, যে হাসপাতাল থেকে ইন্টার্নি করেছেন তা কখনও দেখেননি।
র্যাব জানায়, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর অনুমতি নেই। তারা অবৈধভাবে ছাত্র ভর্তি করলে স্বাস্থ্য অধিদফতর গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করে দেয়। তারপরও প্রতিষ্ঠানটি কিছু ব্যক্তিকে ভর্তি করে এবং পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে সনদ দেয়। দুই শতাধিক ব্যক্তি এভাবে এমবিবিএস সনদ কিনেছেন। তারা নিজেরাই ভুয়া মেডিকেল কাউন্সিল গঠন করে নিজেদের রেজিস্ট্রেশন দিয়ে সারাদেশে চিকিৎসক হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
আবদুল কাইয়ুম স্বীকার করেন, ব্যবস্থাপত্রে যেসব ওষুধের নাম তিনি লিখেছেন, সে সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত জানেন না। অন্য ডাক্তারদের ব্যবস্থাপত্র মুখস্থ করে পড়াশোনা ছাড়াই তিনি চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। এ সময় ডা. স্বপন কুমার তপাদার তার ব্যবস্থাপত্রে অসংখ্য ভুল চিহ্নিত করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়ে প্রশ্ন করলেও তিনি উত্তর দিতে পারেননি। উত্তরার আট নম্বর সেক্টরের সাত নম্বর সড়কের ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে তিনি এমবিবিএস সনদ কিনেছেন বলেও জানান।
Comments 0