Home  • Online Tips • Religious

ইসলামের এক তৃতীয়াংশ জ্ঞান আছে যে হাদিসটাতে

আমীরুল মুমিনীন আবু হাফস্ উমার ইবন আল-খাত্তাব (রা) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন— আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা) কে বলতে শুনেছি— “সমস্ত কাজের ফলাফল নির্ভর করে নিয়্যতের উপর, আর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়্যত করেছে, তাই পাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের জন্য হিজরত করেছে, তার হিজরত আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের দিকে হয়েছে, আর যার হিজরত দুনিয়া (পার্থিব বস্তু) আহরণ করার জন্য অথবা মহিলাকে বিয়ে করার জন্য তার হিজরত সে জন্য বিবেচিত হবে যে জন্য সে হিজরত করেছে।” (সহীহ্ আল-বুখারী: ১/১, সহীহ্ মুসলিম: ২০/৪৬৯২)
প্রেক্ষাপটঃ রাসূলুল্লাহ(সা) এই কথাটি বলেছিলেন, যখন জানা গিয়েছিল যে এক ব্যক্তি মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত(migrate) করেছে এক নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে, আল্লাহ্‌ ও রাসূলুল্লাহ(সা) এর নির্দেশ মেনে চলার জন্য নয়। ব্যাখাঃ এটি বুখারী শরীফের সর্বপ্রথম হাদিস। ইমাম নাওয়াবীও এই হাদিসটি দিয়েই তাঁর ‘৪০ হাদিস’ গ্রন্থ শুরু করেছেন – এর অন্যতম কারণ হলো ইমাম নাওয়াবী এই গ্রন্থটি পড়ার আগে পাঠককে তার নিয়ত বা উদ্দেশ্য ঠিক করে নেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। ইমাম শাফীঈ এর মতে ইসলামের এক তৃতীয়াংশ জ্ঞান রয়েছে এই হাদিসে, ফিকাহশাস্ত্রের ৭০টি বিষয় এই হাদিস এর সাথে জড়িত। আপাতদৃষ্টিতে হাদিসটিকে খুব সাধারণ মনে হলেও এর অর্থ ও তাৎপর্য অনেক গভীর। এই হাদিসটির অন্যতম তাৎপর্য হলো – শাহাদাহ বা কালিমা তাইয়েবা একজন মুসলমানের জীবনে কি ধরণের প্রভাব ফেলবে এই হাদিসটি তা বর্ণনা করে। শাহাদাহ এর দুইটি অংশের সাথে এই হাদিসের সম্পর্কঃ ১ম অংশঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ্‌ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কোন উপাস্য নাই)। অন্যভাবে বললে, একজন প্রকৃত মুসলমান এর প্রত্যেকটি কাজের উদ্দেশ্য বা নিয়ত হবে আল্লাহ্‌ কে খুশী করা এবং আল্লাহ্‌র নির্দেশ মেনে চলা, কারণ তিনি ছাড়া মেনে চলার যোগ্য, উপাসনার যোগ্য আর কেউই নাই। ইবাদতের একমাত্র যোগ্য সত্তা যেহেতু আল্লাহ্‌, কাজেই আল্লাহ্‌র আবেদী তথা হুকুম-আহকাম মেনে চলাই হবে একজন মুসলমানের জীবনের উদ্দেশ্য। একজন মু’মীন পড়াশুনা করবে এই উদ্দেশ্যে যে আল্লাহ্‌ জ্ঞান অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন, সে চাকরী করবে, ব্যবসা করবে এই উদ্দেশ্যে যে আল্লাহ্‌ তাকে পরিবারের দেখাশুনা ও ভরণ-পোষনের দায়িত্ব দিয়েছেন, সে অপচয় করবে না কারণ আল্লাহ্‌ অপচয়কারীকে ভালবাসেন না – এভাবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার উপাস্য ও সন্তুষ্টির লক্ষ্য হবে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা।
আল্লাহ্‌ মহাগ্রন্থ কোরআনে বলেনঃ “আমার ইবাদত করা ছাড়া অন্য আর কোন উদ্দেশ্যেই আমি জ্বীন ও মানুষকে সৃষ্টি করি নাই” – সূরা জারিয়াত(৫১:৫৬)
কারো কোন ভাল কাজের যদি নিয়ত থাকে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা, কেবল তখনই তা ইবাদত বলে গণ্য হতে পারে এবং সে তার জন্য সাওয়াব পেতে পারে।যদি কেউ কোন ভাল কাজ কোন পার্থিব প্রাপ্তি বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে করে, তার প্রতিদান সে দুনিয়ার স্বাভাবিক নিয়মে দুনিয়াতেই পাবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন সাওয়াব বা আখিরাতে কোন প্রতিদান পাবে না। একটা উদাহরন দিচ্ছি। আমি যদি সুন্দর কাপড় পড়ে জুমু’আর নামাজ পড়তে যাই এই কারণে যে আমার বন্ধুরা আমাকে সুন্দর বলবে, আমি আল্লাহর কাছ থেকে আর কোন প্রতিদান পাবো না, কারণ আমার নিয়ত ছিল আমাকে যেন বন্ধুদের চোখে সুন্দর দেখায়, এবং তাদের চোখে আমাকে সুন্দর দেখিয়েছে, অর্থাৎ আমি এর প্রতিদান দুনিয়ায় পেয়ে গেছি। অন্যদিকে, আমি যদি সুন্দর কাপড় পড়ে জুমু’আর নামাজ পড়তে যাই আল্লাহকে খুশী করার উদ্দেশ্যে, এটা মনে রেখে যে রাসূলুল্লাহ(সা) সুন্দর কাপড় পড়ে জুমুআর নামাজ পড়তে যেতেন, তাহলে আমি আখিরাতে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ্‌র কাছ থেকে এর প্রতিবান পাবো। আমার বন্ধুদের চোখে যদি আমাকে ভালো লাগে বা তারা যদি আমার প্রশংসা করে, তবে সেটা হবে বোনাস। আমার বন্ধুরা যদি আমার প্রশংসা না-ও করে তবুও আমি পরের সপ্তাহে সুন্দর কাপড় পড়ে জুমু’আর নামাজে যাওয়ার চেষ্টা করবো । কারণ, আমার লক্ষ্য আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জন, বন্ধুদের প্রশংসা পাওয়া নয়। ২য় অংশঃ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (মুহাম্মদ(সা) আল্লাহর রাসূল)। শাহাদাহ এর প্রথম অংশ বলে আমরা সব কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করব, কিন্তু কিভাবে করব তা বলে শাহাদাহ এর দ্বিতীয় এই অংশটি। এই বাক্যাংশটি মেনে নেয়া অর্থ হচ্ছে, মুহাম্মদ(সা) দ্বীন ইসলাম পালনের যে পথ দেখিয়ে গেছেন, যেভাবে আল্লাহর ইবাদত করা শিখিয়ে গেছেন, যেভাবে তাঁর ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালিত করেছেন, আমরা ঠিক সেভাবেই তা করব। কারণ তিনি আল্লাহর রাসূল ছিলেন, কাজেই তিনি দ্বীন আমাদের কাছে পূর্নরূপে পৌঁছিয়েছেন এবং কোন ত্রুটি করেন নাই।
আল্লাহ্‌ কোরআনে বলেনঃ যে রাসূলের আনুগত্য করে সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদের ওপর আমি আপনাকে পাহারাদার হিসাবে পাঠাইনি। – সূরা নিসা (৪:৮০)
উল্লেখিত হাদিসে এই কথাটি এভাবে বলা হয়েছে যে, হিজরত সহ অন্য সকল কাজেই যে রাসূলুল্লাহ(সা) কে অনুসরণ করবে এবং তাঁর আদেশ-নিষেধসমূহ পালন করে চলবে, সে আল্লাহকেই মেনে চলবে এবং সঠিকভাবে ইসলামের পথে থাকবে। উল্লেখ্য, এই হাদিসটি জনপ্রিয় একটি প্রশ্নঃ অমুসলিম ভাল মানুষেরা কেন পরকালে বেহেশতে যাবে না – এই জিজ্ঞাসার উত্তর দেয়। অমুসলিমরা কখনোই আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার নিয়তে কিছু করে নাই, কাজেই আল্লাহ্‌ আখেরাতে তাদেরকে কোন প্রতিদান দিবেন না। তারা যে উদ্দেশ্যে ভাল কাজ করেছিল, যেমন লোকে তাদেরকে ভাল বলবে, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে – সেই উদ্দেশ্য দুনিয়াতেই সফল হয়েছিল। আল্লাহ্‌ ন্যায়বিচারক, তিনি ন্যায়বিচারই করেছেন। ঐ লোকটি দুনিয়া চেয়েছিল, আল্লাহ্‌ তাকে দুনিয়া দিয়েছিলেন, সে আখিরাত চায়নি, তাই আল্লাহ্‌ তাকে আখিরাত দিবেন না। লক্ষ্য করুন, আমাদের পৃথিবীটাও কিন্তু এই নিয়মেই চলে। আপনি কোন কিছু পেতে চাইলে আপনাকে সেই উদ্দেশ্যে কাজ করতে হবে, এমনি এমনি কেউ আপনাকে সেটা দিয়ে যাবে না। আপনি ডাক্তারি পড়তে চাইলে, আপনাকে ভর্তি ফরম কিনে ডাক্তারী পড়ার জন্য আবেদন করতে হবে। আপনি যত মেধাবী ছাত্রই হোন না কেন, আপনি যদি ঘরে বসে থাকেন, অথবা আপনি যদি কোন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ভর্তি ফরম কিনে জমা দেন, আপনি আশা করতে পারেন না যে আপনি ডাক্তারী পড়তে পারবেন। কাজেই এই হাদিস থেকে আমরা যে প্র্যাক্টিকাল শিক্ষা গ্রহণ করবো তার সারমর্ম হল এইঃ ১) আমরা সর্বদা আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তে কাজ করব। আল্লাহ্‌ যা করতে বলেছেন (ঈমান, নামাজ, রোজা, যাকাত, হজ্জ ও অন্যান্য ভালো কাজ) তা করে এবং যা হতে বিরত থাকতে বলেছেন (শিরক, কারণবিহীন হত্যা, ব্যভিচার, চুরি, গীবত, অহংকার ইত্যাদি) তা হতে বিরত থাকলেই কেবল আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারব। আর, অন্য মানুষের সাথে হাসিমুখে কথা বলা থেকে শুরু করে সততার সাথে লেন-দেন করা, এরকম যেকোন ভাল কাজের প্রতিদান যদি আমরা আখিরাতে পেতে চাই, তাহলে ভাল কাজ গুলো করার সময় মনে মনে এই নিয়ত রাখতে হবে যে আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই কাজটি করছি। পৃথিবীর কারো কাছে প্রতিদান আমি চাই না, ইনশাআল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌ই আমাকে প্রতিদান দিবেন যখন সময় হবে। ২) আমরা রাসূলের (সা) দেখানো পথে কাজ করব। রাসূলুল্লাহ(সা) যেভাবে নামাজ পড়তে বলেছেন সেভাবে নামাজ পড়ব, যেভাবে দু’আ করতে বলেছেন সেভাবে দু’আ করব, যেভাবে ইসলামের প্রচার করতে বলেছেন সেই ভাবে প্রচার করব, যেভাবে পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়-স্বজন ও মানুষের সাথে ব্যবহার করতে বলেছেন ঠিক সেভাবেই করব। নিয়ত ঠিক করার পর, শুধুমাত্র রাসূলের(সা) দেখানো পথ অনুসরনে ভাল কাজ করলেই আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাওয়া যাবে। অন্য কাজ, তা আপাতদৃষ্টিতে যত ভালই হোক না কেন, যদি রাসূলুল্লাহ(সা) না করে থাকেন এবং তাঁর সঠিকপথে পরিচালিত সাহাবীরা না করে থাকেন, তো আমরা সেটা করা থেকে বিরত থাকব। যেমন: আমরা শবে বরাত বা ঈদ-ঈ-মিলাদুন্নবী পালন করব না, কারণ রাসূলুল্লাহ(সা) বা তাঁর সঠিকপথে পরিচালিত সাহাবীরা এই কাজগুলি করেন নাই। কেউ হয়ত বলতে পারেন, এগুলো তো ভাল কাজ, ঐ দিনগুলি পালনের উসিলায় কিছু ইবাদত করা হয়। কিন্তু, এই যুক্তি ঠিক নয়। নামাজ বেশী পড়াও তো ভাল কাজ। আপনি মাগরিব এর নামাজ ৩ রাকাত না পড়ে ৪ রাকাত পড়েন না কেন? পড়েন না কারণ রাসূলুল্লাহ(সা) এভাবে শিখিয়ে যাননি। এমনিভাবে, নামাজের মত বাকী সকল ইবাদত ও কাজেই রাসূলুল্লাহ(সা) কে অনুসরণ করতে হবে, কেবল তখনই আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সন্তুষ্টি পাওয়া যাবে। কারণ, দ্বীনে নতুন আবিস্কৃত প্রথাসমূহ নিকৃষ্টতম কাজ (বিদআত) এবং প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা (মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ)।

Comments 3


How great posting !
r8
thanks

Share

About Author
Zinia Islam
Copyright © 2024. Powered by Intellect Software Ltd