Home  • News • Career News

বুয়েট যখন গন্তব্য...

বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা ১৭ অক্টোবর। প্রস্তুতির সর্বশেষ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ২০১৪ সালের বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম অনিক সরকার

h Topu ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে ভর্তিযুদ্ধ। দরজায় কড়া নাড়ছে বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা। দেখতে দেখতে এসে গেল এবারের বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা। তোমাদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়েই আজকের এই লেখা। তোমরা সবাই ইতিমধ্যেই বুয়েটের প্রশ্নপদ্ধতি সম্পর্কে জেনে গেছ, আশা রাখি। তারপরও সবাইকে জানিয়ে দিই, গতবারের মতো এবারও ভর্তি পরীক্ষা হবে মোট ৬০০ নম্বরের। পরীক্ষা হবে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিতের ওপর। প্রতিটিতেই ২০টি করে প্রশ্ন থাকবে এবং প্রতিটি প্রশ্নের মান ১০। সুতরাং বুঝতেই পারছ, ২০০ নম্বর করে মোট ৬০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। এবারও কোনো নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকছে না। চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী দেখা যায়, সাধারণত গণিতের অংশটুকু প্রতিবছরই বেশ ব্যতিক্রমধর্মী ও চিন্তামূলক হয়। গণিতে ভালো দক্ষতা না থাকলে, এই অংশে নম্বর তোলা বেশ কঠিন। অন্যদিকে, পদার্থবিজ্ঞানের অংশটিতে কোনো বছর সরাসরি বইয়ের সূত্র থেকে প্রশ্ন আসে, আবার কোনো বছর পুরোপুরি বেসিক থেকে প্রশ্ন আসে। তাই আমার মতে, যারা ভালোমতো বুঝে পড়েছ, তাদের জন্য এই অংশটিতে নম্বর তোলা বেশ সহজই হবে। l অনিক সরকাররসায়ন অংশটি প্রায়ই স্মৃতিশক্তিনির্ভর হয়ে থাকে, সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ গাণিতিক সমস্যা থাকে। শেষ মুহূর্তে কিছুটা পরিশ্রম করলেই এ বিষয়টিতে মোটামুটি ভালো নম্বর তোলা সম্ভব। আমার মনে হয়, যেহেতু আর সপ্তাহ খানেক সময় আছে, এই শেষ মুহূর্তে এসে কোনো বিষয় সম্পর্কে নতুন করে প্রস্তুতি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই; বরং আগে যা পড়া হয়েছে, সেগুলোই এখন আবার ভালো করে অনুশীলন করাই শ্রেয়। কারণ, শেষ মুহূর্তে এসে নতুন করে অনেক কিছু পড়ে তেমন কোনো লাভ নেই, বরং তাতে আরও মানসিক চাপ বেড়ে যেতে পারে, দুশ্চিন্তাও মাথায় ভর করতে পারে। যথাসম্ভব চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করবে। একটা কথা মনে রাখবে, বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে দুটি জিনিস সবচেয়ে বেশি লাগে, একটা হলো উপস্থিত বুদ্ধি এবং অন্যটি নিজের সামর্থ্যের প্রতি বিশ্বাস। তাই পরামর্শ থাকবে, মাথা ঠান্ডা রেখে অপেক্ষাকৃত কঠিন বিষয়গুলোতে একটু একটু করে চোখ বুলিয়ে যাও। পুরো সিলেবাস শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রিভিশন দিতে গেলে সময় না পেলে নার্ভাস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই নিজের ওপর আস্থা রাখো। তবে হ্যাঁ, কঠিন সমস্যাগুলোর সঙ্গে সঙ্গে কিছু সহজ গাণিতিক সমস্যাও দেখে নিয়ো, এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। সবচেয়ে সহজ অঙ্কগুলো দিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তর করা শুরু করবে। কোনো প্রশ্ন নিয়েই প্রথম দিকে তিন মিনিটের বেশি সময় নষ্ট করবে না। একবার সময়ের সঙ্গে দৌড়ে পিছিয়ে পড়লে লেখা শেষ করতে হিমশিম খাবে, যা আরও মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়। একটা কথা, এমন যেন না হয় যে কঠিন প্রশ্ন উত্তর করতে গিয়ে সময়ের অভাবে শেষ পর্যন্ত সোজা প্রশ্নই উত্তর করতে পারোনি। মনে রেখো, পরীক্ষায় একটি কঠিন সমস্যা পারা মানে পাঁচ-ছয়জনের থেকে এগিয়ে যাওয়া, কিন্তু সেটার পেছনে ছুটতে গিয়ে একটি সহজ সমস্যা না পারা বা ভুল করে আসা মানে হাজার জনের চেয়ে পিছিয়ে পড়া। তাই কোনো সহজ অঙ্ক যেন পরীক্ষায় ভুল না হয়। আর ভুলে যেয়ো না, বুয়েটে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর করার জন্য প্রদত্ত উত্তরপত্রে জায়গা সীমিত থাকে। তাই অপ্রয়োজনীয় যেকোনো তথ্য বাদ দিয়ে যথাসম্ভব সংক্ষিপ্তভাবে উত্তর করতে হবে। বেশি না লিখে বরং সমাধান-প্রক্রিয়া সঠিক হওয়া ও সঠিক উত্তর বের করে নিয়ে আসতে পারাটাই গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষায় কোন বিষয় আগে বা পরে উত্তর করা নিয়ে দ্বিধান্বিত হয়ে সময় নষ্ট করা একদম উচিত নয়। আমি আবারও বলছি, সময় কিন্তু খুবই কম। ভিন্ন ধরনের বা নতুন প্রশ্ন দেখে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। বরং মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখো যে সব প্রশ্নই আনকমন আসবে এবং সেটা সবার জন্য। কী তথ্য দেওয়া আছে এবং প্রশ্নে কী চেয়েছে, সেটা ভালোভাবে বুঝে সে অনুসারে সূত্র প্রয়োগ করে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবে। অবশ্যই চেষ্টা করবে প্রতিটি প্রশ্নই যত দূর পর্যন্ত পারো উত্তর দিয়ে আসার। সাধারণত পদার্থে ভেক্টর, দ্বিমাত্রিক গতি, মহাকর্ষ, শব্দের বেগ, পৃষ্ঠটান, তুল্য রোধ (বিশেষ করে শর্টসার্কিটসহ সমস্যা), তড়িৎ প্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া, আলোর প্রতিসরণ ও প্রিজম—এই বিষয়গুলো থেকে প্রতিবারই কমবেশি প্রশ্ন আসে। এগুলো শেষ মুহূর্তে ভালো করে দেখে নিয়ো। গণিতে ইন্টিগ্রেশন, সম্ভাব্যতা, লিমিট, বিন্যাস-সমাবেশ (একাধিক টাইপ), জটিল সংখ্যার আর্গুমেন্ট, স্থিতিবিদ্যা (বিশেষ করে লামির উপপাদ্য ও বল ত্রিভুজ-সম্পর্কিত প্রবলেম)—এইগুলো ভালো করে চোখ বুলিয়ে নাও। আর রসায়নে হাইড্রোকার্বন, অ্যালকোহল, জারণ-বিজারণ, অম্ল ক্ষারক সাম্যাবস্থা—এগুলো জোর দিয়ে পড়ো। lবুয়েটে সুযোগ পাওয়ার জন্য ন্যূনতম কত নম্বর পাওয়া লাগে, এ রকম প্রশ্ন অনেকের মনেই ঘুরছে। আমি বলব, এর নির্দিষ্ট কোনো মানদণ্ড নেই। প্রাপ্ত নম্বর আজ পর্যন্ত কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ পায়নি। তাই মোটামুটিভাবে প্রশ্ন কতটা কঠিন অথবা সহজ হলো, সুযোগ পাওয়াটা তার ওপর নির্ভর করে। আমি বিশ্বাস করি, তুমি যদি ঠিকমতো প্রস্তুতি নাও এবং পরীক্ষায় জানা জিনিস ভুল করে না আসো, তোমার সুযোগ পাওয়াটা নিশ্চিত। সবশেষে তোমাদের সবার প্রতি শুভকামনা রইল। তোমাদের সবাইকে বুয়েটের ক্যাম্পাসে দেখার প্রত্যাশায় রইলাম। শুভকামনা সবাইকে।

Comments 0


Share

About Author
Faruk Hossain Topu
Copyright © 2024. Powered by Intellect Software Ltd