Home  • News • International News

২০২০ সালে সবার জন্য ইন্টারনেট

er Topu জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষে মার্ক জাকারবার্গ ও বোনো দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ এই লেখাটি লেখেন। মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। বোনো নামে খ্যাত পল ডেভিড হিউসন ‘ইউ ২’ ব্যান্ডের প্রধান গায়ক এবং অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ‘ওয়ান’ ও এর অঙ্গসংগঠন ‘রেড’-এর প্রতিষ্ঠাতা।

৭০ বছর আগে যখন জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, তখন তার মূল উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধের বদলে শান্তি ও সহযোগিতাপূর্ণ এক পৃথিবী গড়ে তোলা। মানবজাতি দারিদ্র্য, রোগ-শোক ও সংঘর্ষের মতো ব্যাপারগুলোর বিরুদ্ধে এক হয়ে কাজ করবে, সবার মতামত ও অংশগ্রহণের গুরুত্ব থাকবে। এটিই ছিল পরিকল্পনা। সেখান থেকে আমরা অনেক পথ পাড়ি দিয়েছি। আমরা প্রাণঘাতী অনেক রোগের মহামারি থামাতে সক্ষম হয়েছি। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে, একই সঙ্গে আয়ও বেড়েছে। কিছু বড় ধরনের বৈশ্বিক সংঘর্ষ ও দুর্যোগের কবল থেকে আমরা নিজেদের বাঁচাতে পেরেছি। কিন্তু এত উন্নয়নের সুফল সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছাতে পারিনি। মানুষের সাফল্যের গল্প এখনো অনেকটাই উন্নত দেশ ও শহরকেন্দ্রিক। বেশির ভাগ মানুষ এখনো এই উন্নয়নের বাইরে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বিশ্বনেতারা কিছু নতুন বৈশ্বিক লক্ষ্য প্রস্তাব করেছেন। আমরা যদি সবাইকে নিয়ে এমন একটি পৃথিবী গড়তে চাই যেখানে সবাই উন্নয়নের অংশীদার হয়ে নিরাপদে জীবন যাপন করতে পারবে, তাহলে আমাদের এখনো অনেক দূর যেতে হবে। জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের যে রূপরেখা তৈরি করেছে, তাতে এটিই পরিষ্কার হয়ে ওঠে। এই রূপরেখায় ১৭টি উদ্দেশ্য ও ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রা আছে। এর মধ্যে ৯(গ) লক্ষ্যমাত্রাটি অন্য সব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা হলো ২০২০ সালের মধ্যে সবার জন্য ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করা। পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ এখনো ইন্টারনেট সংযোগের আওতার বাইরে। এটা তাদের জন্য যেমন ভালো নয়, তেমনি বাকি অর্ধেকের জন্যও চিন্তার বিষয়। এই শতাব্দীতে বৈশ্বিক উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক সংযোগ একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। আমরা যদি বিশ্বের মানুষকে ভালোভাবে খেয়েপরে বেঁচে থাকা, শিক্ষা গ্রহণ করা, কর্মসংস্থানের সুযোগ খুঁজে নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে চাই তাহলে সবার মধ্যে সংযোগ নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। ইন্টারনেট শুধু তিন বিলিয়ন মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। উন্নয়নের এক অপরিহার্য উপকরণ হিসেবে একে বিবেচনা করতে হবে, যা অনেক বড় বড় কাজকে সম্ভব করে তুলতে পারে। যেমন ইথিওপিয়া ও তানজানিয়ায় কৃষকেরা ফসলের ভালো দাম পেতে, মজুতের সর্বশেষ তথ্য জানতে এমনকি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইনস্যুরেন্সের পেমেন্ট করতে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। নাইজেরিয়ার নাগরিকেরা ‘বাজিট’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করছে, যা সে দেশের সরকার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাজেটের অর্থ ব্যয় করছে কি না তা যাচাই করতে সহায়তা করছে। নারীদের জন্য সম্ভাবনাগুলো আরও বেশি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীদের চেয়ে পুরুষেরা ইন্টারনেটে বেশি সংযুক্ত আছে, তবে নারীরা যখন ইন্টারনেটে সংযুক্ত হয়, তখন তারা এই প্রযুক্তিকে আরও ভালো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক সুযোগ এবং সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করে। গুয়াতেমালায় নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করার জন্য মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নারীদের বিভিন্ন তথ্য দেওয়া হচ্ছে। কেনিয়াতেও এম-পেসা ক্ষুদ্রঋণ ব্যবহার করে মোবাইল ফোনে নারীরা বিভিন্ন আর্থিক সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। গত কয়েক সপ্তাহে আমরা দেখেছি শরণার্থীরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। স্মার্টফোন থাকায় তাদের পক্ষে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে থাকা প্রিয় মানুষদের সঙ্গে, আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে। তুরস্কের সমুদ্রসৈকতে এক সিরিয়ান শিশুর মৃতদেহের ছবি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে গেছে। লাখ লাখ শরণার্থীর প্রতীক হিসেবে সেই ছবি গোটা বিশ্বের মানুষকে কাঁদিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো মানুষের মতামতের প্রতিফলন ঘটানোর পাশাপাশি জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণ ও পরিবর্তনের ব্যাপারেও অবদান রাখে। সারা পৃথিবীকে এক সুতোয় গাঁথার স্বপ্ন দেখা সহজ, তবে তার বাস্তবায়ন করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। এর কোনো সরল সমাধান নেই। অনেক অঞ্চলে সংযোগের পূর্বশর্ত হিসেবে জ্বালানি ও বিদ্যুতের নিশ্চয়তা প্রয়োজন। আফ্রিকার গ্রামগুলোতে প্রতি দশজন মানুষের মধ্যে নয়জনের ঘরে বিদ্যুৎ নেই। সরকার এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। এ জন্যই আমরা প্রেসিডেন্ট ওবামার ‘পাওয়ার আফ্রিকা’ পরিকল্পনা, কংগ্রেসের ‘ইলেকট্রিফাই আফ্রিকা অ্যাক্ট’ এবং আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগের মতো কাজগুলোকে সমর্থন করি। সরকারগুলোর প্রতিষ্ঠিত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে বেসরকারি খাত আরও নানা উদ্যোগ নিতে পারে। বিদ্যমান ডিজিটাল বিভাজন ঘুচিয়ে আনার লক্ষ্যে অনেক সম্ভাবনাময় উদ্যোগ এর মধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় ইন্টেল ফাউন্ডেশন কাজ করছে, মাইক্রোসফট প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করেছে, গুগলের প্রজেক্ট লুন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে। এসব কিছুই প্রমাণ করে প্রযুক্তি ক্ষেত্রের নেতারা কতটা গুরুত্বের সঙ্গে ইন্টারনেটে গোটা পৃথিবীকে সংযুক্ত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। ফেসবুকের ইন্টারনেট ডট ওআরজি উদ্যোগও এর অংশ। প্রযুক্তি-সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও উদ্যোক্তাদের আরও দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে। সিলিকন ভ্যালিকে নিজের ভৌগোলিক সীমানা ছাড়িয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং শরণার্থী সংকটের মতো বিষয়ের সমাধানে অবদান রাখতে হবে। সবচেয়ে দরিদ্র, অবহেলিত জনগোষ্ঠী, যারা নেটওয়ার্কের বাইরে, তাদের হাতের নাগালে প্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা প্রযুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি। বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রার সবগুলোই অর্জিত হতে হবে, কিন্তু সবখানে সবাইকে ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় নিয়ে আসতে পারলে তা অন্য লক্ষ্য সফলভাবে অর্জনের দিকে আমাদের দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাবে। সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস

Comments 0


Share

About Author
Faruk Hossain Topu
Copyright © 2024. Powered by Intellect Software Ltd