Home  • General Knowledge • Bengali & Literature

জাগরণী, ছাত্রদলের গান, কুলি-মজুর- কাজী নজরুল ইসলাম

3218 জাগরণী জাগো রে তরুণ জাগো রে ছাত্রদল স্বতঃ উৎসারিত ঝর্ণাধারায় প্রায় জাগো প্রাণ-চঞ্চল ভেদ-বিভেদের গ্লানির কারা-প্রাচীর ধুলিসাৎ করি জাগো উন্নত শির জবাকুসুম-সঙ্কাশ জাগে বীর, বিধি নিষেধের ভাঙ্গো ভাঙ্গো অর্গল। ধর্ম বর্ণ জাতির ঊর্ধ্বে জাগো রে নবীন প্রাণ তোমার অভ্যুদয়ে হোক সব বিরোধের অবসান সঙ্কীর্ণতা ক্ষুদ্রতা ভোলো ভোলো সকল মানুষে ঊর্ধ্বে ধরিয়া তোলো তোমাদের চাহে আজ নিখিল জনসমাজ আনো জ্ঞানদীপ এই তিমিরের মাঝ, বিধাতার সম জাগো প্রেম প্রোজ্জ্বল ছাত্রদলের গান আমরা শক্তি আমরা বল আমরা ছাত্রদল। মোদের পায়ের তলায় মূর্ছে তুফান ঊর্ধ্বে বিমান ঝড়-বাদল। আমরা ছাত্রদল।। মোদের আঁধার রাতে বাধার পথে যাত্রা নাঙ্গা পায়, আমরা শক্ত মাটী রক্তে রাঙাই বিষম চলার ঘাস। যুগে যুগে রক্তে মোদের সিক্ত হ’ল পৃথ্বীতল। আমরা ছাত্রদল।। মোদের কক্ষচ্যুত-ধূমকেতু– প্রায় লক্ষ্যহারা প্রাণ আমরা ভাগ্যদেবীর যজ্ঞবেদীর নিত্য বলিদান। যখন লক্ষ্মীদেবী স্বর্গে উঠেন আমরা পশি নীল অতল! আমরা ছাত্রদল।। আমরা ধরি মৃত্যু রাজার যজ্ঞ-ঘোড়ার রাশ, মোদের মৃত্যু লেখে মোদের জীবন–ইতিহাস! হাসির দেশে আমরা আনি সর্বনাশী চোখের জল আমরা ছাত্রদল।। সবাই যখন বুদ্ধি যোগায় আমরা করি ভুল! সাবধানীরা বাঁধ বাঁধে সব, আমরা ভাঙি কূল। দারুণ-রাতে আমরা তরুণ রক্তে করি পথ পিছল! আমরা ছাত্রদল।। মোদের চক্ষে জ্বলে জ্ঞানের মশাল, বক্ষে ভরা বাক্, কন্ঠে মোদের কুন্ঠাবিহীন নিত্য কালের ডাক। আমরা তাজা খুনে লাল ক’রেছি সরস্বতীর শ্বেত কমল। আমরা ছাত্রদল।। ঐ দারুণ উপপ্লবের দিনে আমরা দানি শির, মোদের মাঝে মুক্তি কাঁদে বিংশ শতাব্দীর! মোরা গৌরবেরি কান্না দিয়ে ভ’রেছি মা’র শ্যাম-আঁচল। আমরা ছাত্রদল। আমরা রচি ভালোবাসার আশার ভবিষ্যৎ, মোদের স্বর্গ-পথের অভাস দেখায় আকাশ-ছায়াপথ! মোদের চোখে বিশ্ববাসীর স্বপ্ন দেখা হোক সফল। আমরা ছাত্রদল। কুলি-মজুর দেখিনু সেদিন রেলে, কুলি ব’লে এক বাবু সা’ব তারে ঠেলে দিলে নীচে ফেলে! চোখ ফেটে এল জল, এমনি ক’রে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল? যে দধীচিদের হাড় দিয়ে ঐ বাষ্প-শকট চলে, বাবু সা’ব এসে চড়িল তাহাতে, কুলিরা পড়িল তলে। বেতন দিয়াছ?-চুপ রও যত মিথ্যাবাদীর দল! কত পাই দিয়ে কুলিদের তুই কত ক্রোর পেলি বল্‌? রাজপথে তব চলিছে মোটর, সাগরে জাহাজ চলে, রেলপথে চলে বাষ্প-শকট, দেশ ছেয়ে গেল কলে, বল ত এসব কাহাদের দান! তোমার অট্টালিকা কার খুনে রাঙা?-ঠুলি খুলে দেখ, প্রতি হঁটে আছে লিখা। তুমি জান না ক’, কিন- পথের প্রতি ধূলিকণা জানে, ঐ পথ, ঐ জাহাজ, শকট, অট্টালিকার মানে! আসিতেছে শুভদিন, দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ! হাতুড়ি শাবল গাঁইতি চালায়ে ভাঙিল যারা পাহাড়, পাহাড়-কাটা সে পথের দু’পাশে পড়িয়া যাদের হাড়, তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটে ও কুলি, তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধূলি; তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান, তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান! তুমি শুয়ে র’বে তেতালার পরে আমরা রহিব নীচে, অথচ তোমারে দেবতা বলিব, সে ভরসা আজ মিছে! সিক্ত যাদের সারা দেহ-মন মাটির মমতা-রসে এই ধরণীর তরণীর হাল রবে তাহাদেরি বশে! তারি পদরজ অঞ্জলি করি’ মাথায় লইব তুলি’, সকলের সাথে পথে চলি’ যার পায়ে লাগিয়াছে ধূলি! আজ নিখিলের বেদনা -আর্ত পীড়িতের মাখি’ খুন, লালে লাল হ’য়ে উদিছে নবীন প্রভাতের নবারুণ! আজ হৃদয়ের জমা-ধরা যত কবাট ভাঙিয়া দাও, রং-করা ঐ চামড়ার যত আবরণ খুলে নাও! আকাশের আজ যত বায়ু আছে হইয়া জমাট নীল, মাতামাতি ক’রে ঢুকুক্‌ এ বুকে, খুলে দাও যত খিল! সকল আকাশ ভাঙিয়া পড়-ক আমাদের এই ঘরে, মোদের মাথায় চন্দ্র সূর্য তারারা পড়-ক ঝ’রে। সকল কালের সকল দেশের সকল মানুষ আসি’ এক মোহনায় দাঁড়াইয়া শোনো এক মিলনের বাঁশী। একজনে দিলে ব্যথা- সমান হইয়া বাজে সে বেদনা সকলের বুকে হেথা। একের অসম্মান নিখিল মানব-জাতির লজ্জা-সকলের অপমান! মহা-মানবের মহা-বেদনার আজি মহা-উত্থান, উর্ধ্বে হাসিছে ভগবান, নীচে কাঁপিতেছে শয়তান!

Comments 2


ki boss kemo achen
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের প্রেরনা।

Share

About Author
Israt  Jahan
Copyright © 2024. Powered by Intellect Software Ltd