Home  • Online Tips • Agriculture
1223 বীজতলা জীবানুমুক্তকরণ বীজ তলায় বীজ বপনের পর চারা গজালে অনেক সময় দেখা যায় চারা গোড়া পচা রোগে আক্রান্ত হয় এবং অনেক চারা মারা যায়। আবার অনেক সময় চারার শিকড় ক্রিমিতে আক্রান্ত হয়, গিটের সৃষ্টি করে। এ সকল ক্রিমি আক্রান্ত চারা মাঠে রোপনের আক্রমনের ব্যাপকতা বাড়লে ক্ষেতে গাছ ঢলে (wilting) পড়ে। বীজ বপনের পূর্বে যথাযথ ভাবে বীজতলা শোধনের আমরা এ ক্ষতির হাত থেকে ফসলকে রক্ষা করতে পারি। নিম্নে বীজতলা শোধন পদ্ধতি গুলোর বিবরণ দেয়া হলোঃ ক) তাপ প্রয়োগঃ চারটি পদ্ধতিতে তাপ প্রয়োগ করে বীজতলার জীবানুমুক্ত করা যায়। ১। লোহার কড়াই বা ড্রামের মাধ্যমে জীবানুমুক্ত করণঃ বীজতলার উপরের ১০-১৫ সে: মি: মাটি চুলার উপর লোহার কড়াই বা ড্রামে নিয়ে তাপ দিয়ে জীবানুমুক্ত করতে পারি। এ পদ্ধতিতে ১ ঘন্টা সময় আগুনের তাপে মাটিকে ভেজে নিয়ে জীবানুমুক্ত করা যাবে। ২। সরাসরি তাপের মাধ্যমে জীবানুমুক্তকরণঃ বীজতলার উপরে ভাল ভাবে খড় বিছিয়ে দিয়ে তারপর ঐ খড়ে আগুন ধরিয়ে দিতে হবে। ঐ আগুনের তাপে বীজতলার উপরের ৫ সে:মি: মাটি জীবানুমুক্ত হবে। এ পদ্ধতিতে জীবানুমুক্ত করার পর খড় পোড়া ছাই মাটির সাথে এমন ভাবে মেশাতে হবে যেন বীজতলার মাটির ২-৩ সে:মি: গভীরতার নিচে না যায়। প্রতিবারই বীজ বপনের পূর্বে এভাবে মাটি শোধন করে নিতে হবে। তাপের মাধ্যমে বীজতলা জীবানুমুক্ত করতে গেলে মাটিতে রক্ষিত নাইট্রোজেন সার বাতাসে উড়ে যায় ফলে মাটিতে নাইট্রোজেনের অভাব দেখা দেয়। ৩। বাস্পের মাধ্যমে জীবানুমুক্তকরণঃ এই পদ্ধতিতে বীজতলার উপরিভাগের ১০ সে: মি: মাটির মিশ্রণের ভিতর গরম পানির ভাপ ৭০ ডিগ্রী সে: গ্রে: তাপমাত্রায় আধাঘন্টা রাখা হলে মাটিতে বসবাসকারী ক্ষতিকারক জীবানু ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু উপকারী জীবানুর তেমন ক্ষতি হবে না। এই পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। তবে এই পদ্ধতিতে খরচ অনেক বেশী, তাই আমাদের দেশের জন্য তেমন কার্যকর নয়। ৪। সৌর তাপের মাধ্যমে জীবানুকুক্তকরণঃ সোলারাইজেশন বা সৌর তাপের মাধ্যমে জীবানুমুক্তকরণ আমাদের দেশের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত, সস্তা ও কার্যকর পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে বীজতলার মাটি ভালভাবে কোপানোর পর সমতল করে, সাদা ও স্বচ্ছ পলিথিন সিট দিয়ে সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দিতে হবে। তারপর ২/৩ সপ্তাহ ঢাকা অবস্থায় সরাসরি সুর্য্য রশ্মি স্বচ্ছ পলিথিন সিটের উপর পড়বে। এতে করে বীজতলার মাটির ভিতর গরম হয়ে যে তাপ সৃষ্টি হবে তাতে ক্ষতিকারক জীবানুগুলো অসুস্থ্য হয়ে মারা যাবে। এছাড়া তাপবৃদ্ধির ফলে বিষাক্ত এমোনিয়া গ্যাস নির্গত হবে। তাই এ পদ্ধতিতে জীবানুমুক্ত করার সাথে সাথে বীজতলায় বীজ বপন করা যাবে না। এই বিষাক্ত গ্যাস কোদাল দিয়ে কোপালে ধীরে ধীরে বের হয়ে যাবে। তারপর বীজ তলায় বীজ বপন করা যাবে। এই পদ্ধতিতে বীজতলায় বসবাসকারী পোকা মাকড় মারা যাবে আন্যথায় তারা স্থান ত্যাগ করবে। খ) রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ তিন ধরণের রাসায়নিক দ্রব্য আছে যা প্রয়োগে বীজতলা জবীবানুমুক্ত করা যায়। ১) ফরমালডিহাইড ২) মিথাইল ব্রোমাইড ও ৩) ক্লোরোপিক্রিণ নিম্নে ফরমালডিহাইড বা ফরমালিন এর মাধ্যমে বীজতলা শোধণের পদ্ধতি আলোচনা করা হলো। বাজারে ফরমালিনের দুই ধরণের গ্রেড আছে । এক ধরণের গ্রেড গবেষণাগারে ব্যবহার হয় যা অত্যন্ত দামী। আর একটি বাণিজ্যিক গ্রেড যা দামে সস্তা। ফরমালিন একটি উদ্বায়ী রাসায়নিক পদার্থ। উদ্বায়ী হলো এমন পদার্থ যা খোলা জায়গায় রাখলে উড়ে যায়। যেমন- সিপ্রট বা পেট্রোল। বীজতলা জীবানুমুক্ত করার জন্য প্রতি ১ লিটার বাণিজ্যিক ফরমালডিহাইডের সাথে ৫০ লিটার পানি মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরী করতে হবে। এই মিশ্রন প্রতি ১ বর্গ মিটার বীজতলার জন্য প্রায় ১২ লিটার বীজতলার উপর ছিটাতে হবে। তারপর বীজতলা ৪৮ ঘন্টা অর্থাৎ ২ দিন ত্রিপল বা পলিথিন সিট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। যাতে ফরমালিনের বাস্প সংরক্ষণ করা যায়। এরপর ত্রিপল বা পলিথিন সরিয়ে দিয়ে বীজতলা ১০-১৫ দিন উম্মুক্ত রাখতে হবে। এসময় কোদাল দিয়ে বীজতলা ভালোভাবে কোপায়ে ফরমালিনের গ্যাস বের করে দিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ ফরমালিণের গন্ধ থাকবে ততক্ষণ ঐ বীজতলায় বীজ বপন করা ঠিক হবে ন। এই পদ্ধতিতে বীজতলার মাটিতে বসবাসরত সব ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া এবং কিছু কিছু আগাছা বীজও ধ্বংস হয়ে যাবে। বীজতলা জীবানুমুক্ত করার পর ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো ডেটল/ সেভলন পানিতে ডুবিয়ে জীবানুমুক্ত করে নিতে হবে।

Comments 0


Share

Copyright © 2024. Powered by Intellect Software Ltd