Home  • Online Tips • Agriculture

ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ

ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ বাংলাদেশে প্রায় এক'শ রকমের ফসল জন্মে। এর মধ্যে সবজি জাতীয় ফসলই বেশি। সবজি ফসলের মধ্যে বেগুন, আলু, টমেটো, শিম, বরবটি, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, চিচিঙ্গা, করলা, ঝিঙ্গা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ঢেঁড়শ, মূলা, ইত্যাদি। এর ভেতরে কিছু সবজি ফসল আছে যা সারা বছরই জন্মে। যেমন বেগুন। আবার কিছু মৌসুমী সবজি আছে যা জন্মে গ্রীষ্মকালে এবং শীতকালে। এখন গ্রীষ্মকালীন সবজির ফলন প্রায় শেষ। চারিদিকে চলছে শীতকালীন সবজি চাষের তোড়জোর। শীতকালীন সবজির মধ্যে রয়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মটরশুটি, পালন শাক, শিম, ডাটা শাক, মূলা ইত্যাদি। উক্ত প্রতিবেদন ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ নিয়ে। ফুলকপি ফুলকপি একটি পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও আমাদের দেশে জনপ্রিয় সবজি। বাংলাদেশে ১৯৯৬-৯৭ সালে মোট ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলকপি চাষাবাদ হয় এবং উৎপাদন হয় প্রায় ৭৬ হাজার টন। আমাদের দেশে চাষকৃত ফুলকপি অধিকাংশই সংকর জাতের এবং বিদেশ থেকে আমদানিকৃত যা স্থানীয় আবহাওয়ায় বীজ উৎপাদন করে না। ঠাণ্ডা ও আর্দ্রতা জলবায়ুতে ফুলকপির ভাল ফলন পাওয়া যায়। সেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধা আছে এমন ধরনের সব মাটিতে ফুলকপির চাষ ভাল হয়। আমাদের দেশে মাঘী, অগ্রহায়ণী, পৌষালী, বারি ফুলকপি-১, ২ ইত্যাদি বিভিন্ন জাতের ফুলকপি পাওয়া যায়। ফুলকপি বপনের উপযুক্ত সময় হল আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর। প্রতি শতকে বীজের পরিমাণ দুই গ্রাম। বীজতলার জন্য ৩ ×১ মিটার মাপের ১৫ সে.মি. উঁচু বেড তৈরি করলে ভাল হয়। বীজতলার উপরের স্তরে ১:১ অনুপাতে পচা গোবর/আবর্জনা সার এবং দো-আঁশ মাটির মিশ্রণ ছড়িয়ে দিতে হবে। এরপর তিন-চার সপ্তাহ পলিথিন দিয়ে মাটি ঢেকে রেখে শোধনের পর পাঁচ সে. মি. দূরে দূরে লাইনে ছিটিয়ে ১০ গ্রাম বীজ বুনতে হবে। অতিবৃষ্টি ও রোদের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য উপরে পলিথিন বা চাটাইয়ের আচ্ছাদন দিতে হবে। ১০ দিন পর দ্বিতীয় বীজতলায় পাঁচ সে.মি. পর পর সারি করে দুই সে.মি. দূরে দূরে শেষ বিকেলে স্থানানস্তর করতে হবে। দ্বিতীয় বীজতলায় চারা স্থানানস্তরের পাঁচ দিন পর বীজতলার চারায় প্রতি ১০ লিটার পানির সাথে ৩০ গ্রাম সোহাগা মিশিয়ে স্প্রে করা অত্যাবশ্যক। জাত : এ দেশে এখন ফুলকপির পঞ্চাশটিরও বেশি জাত পাওয়া যাচ্ছে। শীতকালেই আগাম, মধ্যম ও নাবি মওসুমে বিভিন্ন জাতের ফুলকপি আবাদ করা যায়। আগাম চাষ করা যায় ফুলকপির এমন জাতগুলো হলো অগ্রহায়ণী, আর্লি পাটনা, আর্লি স্নোবল, সুপার স্নোবল, ট্রপিক্যাল স্নো ৫৫, সামার ডায়মন্ড এফ১, ম্যাজিক স্নো ৫০ দিন এফ১, হোয়াইট বিউটি, কেএস ৬০, আর্লি বোনাস, হিট মাস্টার, ক্যামেলিয়া, আর্লি মার্কেট এফ১, স্পেশাল ৪৫ এফ১, স্নো কুইন এফ১ ইত্যাদি। এসব জাতের বীজ শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে বপন করা যায়। মাঝ মওসুমের উপযুক্ত অনেক জাত আছে। এগুলো হলো বারি ফুলকপি ১ (রূপা), চম্পাবতী ৬০ দিন, চন্দ্রমুখী, পৌষালী, রাুসী, স্নোবল এক্স, স্নোবল ওয়াই, হোয়াইট টপ, স্নো ওয়েভ, মোনালিসা এফ১, ম্যাজিক ৭০ এফ১, বিগটপ, চন্দ্রিমা ৬০ এফ১, হোয়াইট ফ্যাশ, বিগশট, হোয়াইট কনটেসা ইত্যাদি। এসব জাতের বীজ ভাদ্র-আশ্বিন মাসে বপন করতে হয়। নাবি করে ফুলকপি চাষ করতে চাইলে মাঘী বেনারসি, ইউনিক স্নোবল, হোয়াইট মাউন্টেন, এরফার্ট ইত্যাদি জাত লাগানো যেতে পারে। এসব জাতের বীজ আশ্বিন-কার্তিক মাসে বপন করতে হয়। চারা তৈরি : ফুলকপির চারা বীজতলায় উৎপাদন করে জমিতে লাগানো হয়। বীজতলার আকার এক মিটার পাশে ও লম্বায় তিন মিটার হওয়া উচিত। সমপরিমাণ বালু, মাটি ও জৈবসার মিশিয়ে ঝুরঝুরা করে বীজতলা তৈরি করতে হয়। দ্বিতীয় বীজতলায় চারা রোপণের আগে সাত থেকে আট দিন আগে প্রতি বীজতলায় ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০ গ্রাম টিএসপি ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। পরে চারা ঠিকমতো না বাড়লে প্রতি বীজতলায় প্রায় ১০০ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দেয়া ভালো। প্রতি শতক জমিতে ফুলকপি চাষের জন্য এ রকম একখ বীজতলায় ২ থেকে ২.৫ গ্রাম বীজ বুনলেই চলবে। চারা রোপণ : বীজ গজানোর ১০ থেকে ১২ দিন পর গজানো চারা দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তর করতে হয়। চারায় পাঁচ থেকে ছয়টি পাতা হলেই তা রোপণের উপযুক্ত হয়। সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫ দিন বয়সের চারা রোপণ করা হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব দেয়া লাগে ৬০ সেন্টিমিটার বা দুই ফুট এবং প্রতি সারিতে চারা থেকে চারার দূরত্ব দিতে হবে ৪৫ সেন্টিমিটার বা দেড় ফুট। চারা রোপণের সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন শিকড় মুচড়ে বা বেঁকে না যায়। এতে চারার মাটিতে লাগতে দেরি হয় ও বৃদ্ধি কমে যায়। সার ব্যবহার: পচা গোবর জমি তৈরির সময় ৫০ কেজি দিতে হবে। প্রতি শতকে ইউরিয়া শেষ চাষের সময় ২৫০ গ্রাম, তার ২০ দিন পর ৫০০ গ্রাম এবং ৩৫ দিন পর ২৫০ গ্রাম। টিএসপি শেষ চাষের সময় ৭০০ গ্রাম দিতে হবে। এমপি শেষ চাষের সময় ২০০ গ্রাম, ২০ দিনপর ৩০০ গ্রাম এবং ৩৫ দিন পর ২০০ গ্রাম। জিপসাম জমি তৈরির সময় ৪০০ গ্রাম দিতে হবে। জিংক সালফেট শেষ চাষের পর ৪০ গ্রাম এবং সোহাগা শেষ চাষের সময় ৪০ গ্রাম। ২৫ থেকে ৩০ দিন বয়সের চারা সারি থেকে সারি ৫০ সে.মি. (২০ ইঞ্চি) এবং চারা থেকে চারা ৪০ সে.মি. (১৬ ইঞ্চি) দূরত্ব বজায় রেখে রোপণ করতে হবে। প্রথম ও দ্বিতীয়বার সার উপরি প্রয়োগের পর পরই সারির দু'পাশের মাটি আলগা করে গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হবে। এতে সেচ ও নিষ্কাশন উভয় কাজে সুবিধা হবে। চারা রোপণের ৪৫ দিন পর কপি সংগ্রহ করতে হয়। শতকে ৬০-৮০ কেজি আর একরে ৬ থেকে ৮ টন ফুলকপি জন্মে। সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা : সার দেয়ার পরপরই সেচ দিতে হবে। এ ছাড়া জমি শুকিয়ে গেলে সেচ দিতে হবে। জমিতে পানি বেশি সময় ধরে যেন জমে না থাকে সেটাও খেয়াল করতে হবে। সার দেয়ার আগে মাটির আস্তর ভেঙে দিয়ে নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। বিশেষ পরিচর্যা : ফুলকপি গাছের সারি মাঝে সার দেয়ার পর সারির মাঝখানের মাটি তুলে দু’পাশ থেকে গাছের গোড়ায় টেনে দেয়া যায়। এতে সেচ ও নিকাশের সুবিধা হয়। তবে ফুলকপির ফুল সাদা রাখার জন্য কচি অবস্থায় চার দিক থেকে পাতা টেনে বেঁধে ফুল ঢেকে দিতে হবে। সূর্যের আলো সরাসরি ফুলে পড়লে ফুলের রঙ তথা ফুলকপির রঙ হলুদাভ হয়ে যাবে। বালাই ব্যবস্থাপনা : এ দেশে ফুলকপির সবচেয়ে তিকর পোকা হলো মাথাখেকো লেদা পোকা। নাবি করে লাগালে সরুই পোকা বা ডায়মন্ড ব্যাক মথ বেশি তি করে। বীজ উৎপাদনের জন্য চাষ করলে পুষ্পমঞ্জরীকে জাব পোকার হাত থেকে রা করতে হবে। অন্যান্য পোকার মধ্যে ক্রসোডলমিয়া লেদা পোকা, কালো ও হলুদ বিছা পোকা, ঘোড়া পোকা ইত্যাদি মাঝে মাঝে তি করে থাকে। ফুলকপির পাতায় দাগ ও কালো পচা রোগ প্রধান সমস্যা। এ ছাড়া চারা ধসা বা ড্যাম্পিং অফ, কাব রুট বা গদাই মূল, মোজেইক, পাতার আগা পোড়া ইত্যাদি রোগও হয়ে থাকে। বোরন সারের অভাবে ফুলে বাদামি দাগ পড়ে ও কা ফাঁপা হয়ে যায়। আবশ্যকীয় কার্যাবলী: ১. পানি নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত উঁচু জমিতে চাষ করতে হবে। ২. আগাছা দমন করতে হবে। ৩. সেচ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ৪. রোগ-বালাই দমনে উপযুক্ত ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ৫. অবশ্যই সোহাগা ব্যবহার করতে হবে। ৬. সঠিক বয়সের সুস্থ ও সবল চারা স্থানান-র, পরিমিত সার, সেচ ও অন্যান্য অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা সঠিক সময় ও নিয়ম অবশ্যই সম্পাদন করতে হবে। ফসল তোলা ও ফলন : সাদা রঙ ও আঁটসাঁট থাকতে থাকতেই ফুলকপি তুলে ফেলা উচিত। মাথা ঢিলা ও রঙ হলদে ভাব ধরলে দাম কমে যায়। একরপ্রতি ফলন ১৫ থেকে ২৫ টন, হেক্টরে ৩৫ থেকে ৬০ টন। কেঁচো সার দিলে ফুলকপি ভালো হয় ফুলকপি প্রজাতির বিচারে দুই রকম। ইউরোপিয়ান এবং এশিয়ান টাইপ। প্রথম টাইপে কম তাপমাত্রায় ফুল হয়। দ্বিতীয় টাইপে বেশি তাপমাত্রায় ফুল তৈরি হয়। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে ফুল পেতে হলে এশীয় টাইপ এবং পরবর্তী সময়ের জন্য ইউরোপিয়ান টাইপ রোপণ করতে হবে। বীজ বপন ও চারা তৈরি : ঝুরঝুরে মাটি তৈরি করে প্রতি এক বর্গমিটার জায়গায় এক ঝুড়ি পচা গোবর সার প্রয়োগ করতে হবে। কেঁচো সার প্রয়োগ করলে চারার বৃদ্ধি ভালো হয়। রাসায়নিক সার বীজতলায় প্রয়োগ না করলেও চলবে। মাটির ভেতরে থাকা ছত্রাক বিনাশ করতে ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা দরকার। সে ক্ষেত্রে জমি বীজতলা তৈরির ১৫ দিন আগে থেকে প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে, যাতে ভেতরের তাপমাত্রা বের হতে না পারে। সেপ্টেম্বর মাসে বীজতলা মাটি থেকে ১৫ সেন্টিমিটার উঁচুতে তৈরি করতে হবে। বিঘাপ্রতি ৪০ থেকে ৭০ গ্রাম বীজ দরকার। বীজ লাইন করে রোপণ করলে চারা সুস্থ ও সবল হয়। একটি চারা থেকে অন্যটির দূরত্ব হওয়া দরকার পাঁচ থেকে সাত সেন্টিমিটার। বীজ ফেলার পাঁচ থেকে সাত সপ্তাহ পর চারা মূল জমিতে রোপণের উপযুক্ত হয়ে যায়। গোড়া পচা রোগ থেকে চারাকে রক্ষা করতে ডায়াথেন এস-৪৫-এর ০.২ শতাংশ দ্রবণ দিয়ে মাটি ভিজিয়ে নিতে হবে। মূল জমিতে বিঘাপ্রতি দুই টন গোবর সার প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরির সময়ে ১৫ কেজি ইউরিয়া, ৬০ কেজি ফসফেট ও ১০ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। রোপণের আগে গোড়া অনুখাদ্যের দ্রবণে ভিজিয়ে নিলে বৃদ্ধি ভালো হয়। জমি তৈরি করার সময় ১৫ কেজি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সার জমিতে ছড়িয়ে না দিয়ে গাছের গোড়ার চারপাশে দিতে হবে। অনুখাদ্যের অভাব মেটাতে চারা অবস্থায় গাছে ০.৩ শতাংশ বোরন স্প্রে করা যেতে পারে অথবা দেড় থেকে দুই কেজি বোরন মূল জমিতে স্প্রে করা যেতে পারে। পরিচর্যা : মাটি বেশি শুকনো হয়ে গেলে হালকা সেচ দিতে হবে। ঘাসের উপদ্রব হলে চারা রোপণের আগে তা তুলে ফেলতে হবে। ফুলকপির নানা রকমের শারীরবৃত্তীয় উপসর্গ দেখা দিতে পারে, এর মধ্যে পাতা লম্বা হয়ে যাওয়া, ছোট ফুল, ফুল না আসা, ভ্যাদভেদে রোগ অন্যতম। বাদামি রোগ হয় বোরনের অভাবে। মলিবডেনামের অভাবে পাতা সরু ও লম্বা হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে বোরন দেওয়ার পদ্ধতি আগেই বলা হয়েছে। ফুলকপিতে বেশ কয়েকটি ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগ দেখা যায়। এর মধ্যে ধসা রোগ, ক্লাব রট, ডাউনি মিলডিউ, পাতা পচা রোগ উল্লেখযোগ্য। ধসা রোগ ঠেকাতে ডায়াযেন এম-৪৫-এর ০.২ শতাংশ দ্রবণে মাটি ভিজিয়ে নিতে হবে। পাতা পচা রোগ ঠেকাতে ব্যাকটেরিয়ানাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হয়। এক ধরনের মাছির শুককীট রয়েছে যারা শিকড় খেয়ে ফেলে। এতে গাছ শুকিয়ে যায়। এ ধরনের সমস্যা হলে ম্যালাথিয়ন ০.০২ শতাংশ দ্রবণ স্প্রে করতে হবে। ফসল : চারা রোপণের ৭০ থেকে ৮০ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়। ঠিকঠাকমতো চাষ করতে পারলে বিঘাপ্রতি দুই থেকে তিন টন ফুল পাওয়া যায়। শংকর প্রজাতির ক্ষেত্রে বিঘাপ্রতি সাত থেকে আট টন ফুল পাওয়া সম্ভব। বাঁধাকপির বিষ্ময় একই গাছে অনেক ফল হয়

বাঁধাকপির চাষ, একই গাছে অনেক ফল ফলানোর পদ্ধতি

আমরা সাধারণত মৌসুমে একটি গাছে একটি বাঁধাকপির ফলনই দেখে আসছি কিন্তু আপনাকে যদি বলা হয় একই মৌসুমে একই গাছে চারটি বাঁধাকপি ফলানো সম্ভব, তবে বিষয়টি আপনার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হবে। আর এই অসম্ভবই সম্ভব করেছেন এদেশের একজন প্রগতিশীল কৃষক রেজিন কোড়াইয়া। ভদ্রলোক মূলক একজন অর্থনীতিবিদ, কিন্তু এখন কালিগঞ্জে নিজ গ্রামে কৃষিকাজে ব্যস্ত। তিনি তাঁর মাঠে কাজ করতে করতেই বাঁধাকপির অস্বাভাবিক ফলনের এই উদ্ভাবনটি ঘটিয়েছেন। একদিন বাঁধাকপির মাঠ থেকে ফসল সংগ্রহের সময় এই ঘটনাটি ঘটে। কপিটি কাণ্ড থেকে কাটার সময় কপির নিচের দিককার তিনটি পাতা অসতর্কভাবেই কাণ্ডের সাথে থেকে যায়। দু-চার দিন পর মাঠের অন্য পরিপক্ক কপিগুলো কাটতে এলে আগের পাতাযুক্ত কান্ডের দিকে তাঁর দৃষ্টি যায়। খুব খেয়াল করে দেখলেন প্রতিটি পাতার সংযোগস্থলে নতুন কুঁড়ি জন্মেছে। উদ্ভাবনী চেতনা তাকে দারুণভাবে নাড়া দেয়। তিনি ভাবলেন নতুন করে এই কাণ্ডের যদি যত্ন নেয়া যায়, তবে হয়তো এই কুঁড়িগুলো বড় হয়ে বাঁধাকপি হিসাবে ফলবে। গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে তাতে আবার শুকনা গোবার, খৈল এবং কচুরিপানা (শুকনা) ব্যবহার করলেন। বলে রাখা ভালো, রেজিন কোড়াইয়া তাঁর কৃষি আবাদে সর্বক্ষেত্রেই জৈব সার ব্যবহার করেন, এতে ভালো ফল পাচ্ছেন। তিনি বলেন, কচুরিপানা ব্যবহারের ফলে গাছের গোড়ার মাটিতে সবসময়ই প্রয়োজনীয় রস থাকে। অন্যদিকে গোবর ও খৈল গাছকে খাদ্যের যোগান দেয়ায় শুকনো কান্ডটি তরতাজা হয়ে বেড়ে ঐ কুঁড়িগুলো থেকেই জন্ম নেয় আরও তিনটি বিশাল আকারের বাঁধাকপি। অথার্ৎ প্রথম ফলনে একটি এবং পরের ফলনে তিনটি মোট চারটি বাঁধাকপি ফলালেন একই মৌসুমে একই গাছে। যে কৌশলে এ কাজটি করবেনঃ আপনারা জানেন, বেলে দৌআঁশ মাটি, যেখানে পানি দাঁড়ায় না, প্রচুর সূর্যকিরণ পড়ে এমন জায়গা বাঁধা কপি ফলানোর জন্য ভালো। আর একই গাছ থেকে একই মৌসুমে চারটি কপির ফলন পেতে হলে আগাম অথার্ৎ সেপ্টেম্বরেই চারা লাগাতে হবে। প্রথম ফলন আসবে একটি করে নববই দিনে অথার্ৎ ডিসেম্বরে। দ্বিতীয় ফলনে তিনটি কপির জন্য ঐ কান্ডের পরিচর্যা শুরু করতে হবে প্রথম পলন কেটে নেওয়ার পর থেকেই ডিস্বের থেকেই। প্রথম কপিটি কাটার সময় কপির নিচদিকের ৩/৪ টিপাতা কান্ডের সংগে রেখে কাটতে হবে। ঐ পাতাগুলোর সংযোগস্থল থেকেই নতুন কপির জন্ম হবে। দ্বিতীয় ফলনে তিনটি করে বাঁধাকপি আসবে ৫০/৬০ দিনে অথার্ৎ ফেব্রুয়ারী মেষ নাগাদ। তা হলে লক্ষ্য করুন, আপনি ডিসেম্বরে একটি করে যে ফলন পাচ্ছেন তা আগাম হিসাবে বাজারে ভালা দাম পাচ্ছেন এবং জানুয়ারী / ফেব্রুয়ারী ফলন ভরশীত সৌসুমের ফলন হিসাবে বিবেচিত হবে। চাষ যেহেতু একই গাছ থেকে দু'বারে চারটি কপির ফলন নিচ্ছেন সেহেতু এর পরিচর্যা ও খাদ্যের যোগান আপনাকে ঠিকমতো দিতে হবে। মাটিকে প্রচলিতভাবে জ্জ বার লাঙ্গল অথবা কোদাল দিয়ে উল্টে-পাল্টে ঝুরঝুরা করে তৈরী করতে হবে। এই সময় খৈল ও গোবর মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা রোপণের গর্তে আলাদাভাবে আধসের গোবর, এক ছটাক খৈল ও এক মুঠো ছাই মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে । চারা রোপন পদ্ধতি জমি তৈরি শৈষ হলে একটি গাছে চারটি করে কপি পেতে হলে গাছের একটি সারি থেকে অন্য সারি ২৫"-২৬" এবং চারা থেকে চারা ২৪" দূরত্বে লাগাতে হবে। গাছপ্রতি যদি দুটি করে কপি ফলাতে চান তবে একসারি থেকে অন্য সারি ২২" এবং চারা থেকে চারা ২৪" দুরত্বে লাগাতে হবে। চারা রোপন করার পর তিনদিন পানি দিতে হবে। ১৫ দিন পর পরিমাণ মতো পচানো গোবর ও খৈল একসংগে মিশিয়ে জমিতে ছড়িয়ে দিতে হবে। খৈল ও গোবার মাটিতে মেশানোর জন্য প্রয়োজনে মাটি কুপিয়ে আলগা করে দিতে হবে। খেয়াল রাখবেন গাছের গোড়া যেন ভূমি থেকে উঁচু থাকে এবং গাছের গোড়ায় শুকনা কচুরিপানা দিয়ে রাখবেন, এতে কুয়াশার পানি ধরে রেখে গোড়া ঠান্ডা রাখবে। এমনি পরিচর্যা নিলে প্রথমে একটি করে বাঁধাকপি ফলবে। কপি পুষ্ট হলে বিলম্ব না করে কেটে ফেলতে হবে। কাটার নিয়ম আগেই বলেছি কান্ডের গোড়ায় ৩/৪ পাতা রেখে কাটতে হবে যেন কোনোক্রমেই কান্ডের ক্ষতি না হয়। এই পাতাগুলোর সংযোগস্থলে নতুন কপি জন্মাবে। তাই এর পরিচর্যা করতে হবে। পরিচর্যা কান্ডের গোড়ায় আগের মতো সার প্রয়োগ করে কোদাল দিয়ে মাটি আলগা করতে হবে এবং কান্ডের গোড়ায় মাটি দিয়ে উচুঁ করে দিতে হবে। জমিতে রস বুঝে পানি সেব দিতে হবে। এমনি পরিচর্যার পর এই কান্ডের পাতার সংযোগ স্থান থেকে আরও অন্তত তিনটি নতুন কপির জন্ম হবে। অথার্ৎ প্রথমে একটি এবং পরের ফলনে তিনটি মোট চারটি বাঁধাকপি একই গাছ থেকে। অতএব আপনিও এবার নিজ বাগানে এই কৌশলটি প্রয়োগ করে অল্প জমিতে অধিক ফলনের জন্য সচেষ্ট হতে পারেন।

আগাম ফুলকপি চাষ

ফুলকপির ইংরেজি নাম Cauliflower ও এর বৈজ্ঞানিক নাম B. oleracea var. botrytis.। আগাম ফুলকপির জন্য বর্ষা শেষ হওয়ার আগেই চারা উৎপাদন করতে হয়। ওই সময়ে ঘরের বারান্দায়, টবে বা গামলায় বীজতলা তৈরি করা যেতে পারে। পরবর্তী ফুলকপির জন্য বীজ বাইরে বীজতলায় ফেলা হয়। সাধারণত এক হেক্টরে রোপণের প্রয়োজনীয় সংখ্যক চারা উৎপন্ন করতে ৩৭৫-৭৫০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। প্রমাণ আকারের ৩×১ মিটার বীজতলার জন্য ১২-১৮ গ্রাম বীজ দরকার। বীজ বপন করার তিন-চারদিনের মধ্যে চারা অঙ্কুরিত হয়। এর প্রায় এক সপ্তাহ পরে চারা দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তরিত করে ৪-৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে রোপণ করা হয়। এক মাসের বয়সের চারা নির্দিষ্ট স্থানে রোপণের উপযুক্ত হয়। ফুলকপি চাষের জন্য ৩০-৩৫ দিন বয়সের চারা লাগাতে হয়। রোপণ দূরত্ব ৬০´৪৪ সেন্টিমিটার দিতে হয়। জমি তৈরি : মূল জমি চাষ দিয়ে বেশ ঝুরঝুরে করে নিতে হয়। গোবর সার, কম্পোস্ট, খৈল, ছাই ইত্যাদি সারের অর্ধেক পরিমাণ ভূমি কর্ষণকালে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয়। চারা রোপণ : ৬-৭টি পাতাবিশিষ্ট চারা রোপণ করতে হয়। আগাম ফসলের জন্য ৬০ সেন্টিমিটার পর পর সারিতে ৪০-৫০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে মধ্য ফসলের জন্য ৬০ সেন্টিমিটার পর পর সারিতে ৫০-৬০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে চারা রোপণ করা যেতে পারে। চারা রোপণের উপযুক্ত সময় বিকাল। রোপণের পর চারার গোড়ায় ঝাঝরি দিয়ে পানি সেচ দেয়া দরকার। পরদিন সকালে কলার খোল, কচুরিপানা প্রভৃতি দ্বারা ছায়ার ব্যবস্থা করতে হয়। এ ছায়া বিকালে সরিয়ে চারায় রাতে শিশির পড়ার সুযোগ দিতে হয়। তিন-চারদিন পর্যন্ত এ ব্যবস্থা এবং সকাল-বিকাল পানি সেচ দিতে হয়। তারপর ছায়া সরিয়ে ফেলা হয় এবং পানি সেচ কেবল বিকালে দিলেই চলে। মাটিতে জো এলে গাছের সারির মধ্যবর্তী স্থানে গাছের গোড়ার মাটি উঠিয়ে, ভেলি করে দেয়া দরকার। রোপণের প্রায় দু’মাসের মধ্যে গাছে ফুল দেখা দেয়। ফুল দেখা দেয়ার ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে ফুলকপি খাওয়ার উপযুক্ত হয়। মাটি : আগাম ফসলের জন্য দোআঁশ এবং নাবি ফসলের জন্য ভারী মাটি উত্তম। এঁটেল দোআঁশ মাটিতে প্রচুর জৈব সার প্রয়োগ করে ভালো ফসল জন্মানো যায়। সারের মাত্রা ও সার প্রয়োগ : ফুলকপি চাষের জন্য মাঝারি উর্বর মাটিতে হেক্টর প্রতি ৩০০-৩৫০ কেজি ইউরিয়া, ১৩০-১৫০ কেজি টিএসপি, ১৫০-২০০ কেজি এমপি এবং ৫-৭ টন গোবর সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এছাড়া অম্ল মাটি ৪০০-৭০০ কেজি, ডলোচুন এবং যথারীতি অনুসার (ঘাটতি মাটিতে) প্রয়োগ করতে হয়। জমি তৈরির সময় অর্ধেক গোবর, সমুদয় টিএসপি ও অর্ধেক এমপি সার প্রয়োগ করতে হয়। বাকি অর্ধেক গোবর চারা রোপণের এক সপ্তাহ আগে মাদায় দিয়ে মিশিয়ে রাখতে হয়। ইউরিয়া এবং বাকি অর্ধেক এমপি সার তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হয়। চারা লাগানোর ৮-১০ দিন পর প্রথম কিস্তি এবং চারা লাগানোর ৩০-৫০ দিন পর অবশিষ্ট সার উপরি প্রয়োগ করতে হয়। অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা : ফসলের নিবিড় যত্ন যেমন আগাছা দমন, সার প্রয়োগ, পানি সেচ নিষ্কাশন এবং চটা ভেঙে দেয়া মাটি ঝুরঝুরে ও বায়ুর চলাচলের উপযোগী রাখা আবশ্যক। ফুলকপির রঙ সাদা রাখার জন্য কচি অবস্থা থেকে চারদিকের পাতা বেঁধে ঢেকে দিতে হয়। ফুল ঢেকে দেয়ার এ পদ্ধতিকে ব্ল্যানচিং বলে। পোকা দমন : ফুলকপির বিভিন্ন পোকার মধ্যে জাবপোকা। পাতা ও ফুলের রস শোষণ করে। এফিডান সেভিন ৫% পোকা দমন করে। সেফস বা নেক্সিয়ন ও (০.৫%) ওষুধও ছিঁটানো যায়। অন্যান্য পোকার মধ্যে মাছি পোকা ও মখ উল্লেখযোগ্য। এদের দমনের জন্য ফলিখায়ন কিংবা সুমিথিয়ন প্রযোজ্য। রোগ দমন : ফুলকপির রোগের মধ্যে ঢলে পড়া এবং মূলের গিট রোগ উল্লেখযোগ্য। এর আক্রমণে রোদের সময় গাছ পাতা ঢলে পড়ে। শিকড় ফুলে স্থানে স্থানে মোটা হয়। প্রতি ৫০ গ্যালন পানির সঙ্গে ২৩০ গ্রাম পরিমাণে ক্যালোমেল মিশিয়ে গাছে ছিঁটানো ফলপ্রদ। মূল গিট রোগ এক ধরনের নেমাটোড দ্বারা সৃষ্ট। এতে মূলে গিট দেখা দেয়। এর আক্রমণে ইথিলিয়ন ডাই-ব্রোমাইড দ্বারা মাঠে ফিউমিগেশন করার প্রয়োজন হয়। মাটিতে চুন প্রয়োগেও উপকার পাওয়া যায়। অপুষ্টি রোগ : মলিবডেনামের অভাবে হুইপটেইল রোগ দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত অম্লীয় মাটিতে এরূপ ঘটতে পারে। হেক্টর প্রতি ১.২ কেজি পরিমাণে সোডিয়াম কিংবা এমোনিয়াম বলিবডেট প্রয়োগে এ সমস্যা দূর করা যায়। বোরনের অভাবে বাদামি বর্ণের দাগ হয়। কখনো কখনো বিক্ষিপ্ত ফাঁপা কান্ডের সৃষ্টি হয়। অম্লীয় মাটিতে হেক্টর প্রতি ১২-১৫ কেজি পরিমাণে সাধারণ বোরাক্স সোডিয়াম টেট্রাবোরেট প্রয়োগে এ রোগ দমন করা যায়। বোতামায়ন : বোতামায়ন রোগে ছোট আকারের গাছে অতি ছোট আকারে ফুল ধরে। নাইট্রোজেনের অভাবে কিংবা খাদ্য উপাদানের ঘাটতিতে এরূপ ঘটতে পারে। অনেক সময় ফুলকপি ক্ষুদ্র আকারের প্রাক-মঞ্জুবি উৎপাদন করে। এগুলো বিক্রির উপযুক্ত নয়। বোতামায়নের কারণ ও প্রতিকার : এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করা হলো। ১. অকালে ফুলকপি গাছে প্রাক-মঞ্জুরি উৎপাদিত হওয়াই বোতামায়নের কারণ ২. আগাম জাতেই বোতামায়ন বেশি হয় ৩. ফুলকপির প্রাক-মঞ্জুরি উৎপাদন তাপমাত্রার ওপর নির্ভরশীল ৪. আগাম জাতের গাছ নিম্ন তাপমাত্রায় উন্মোচিত হলে বোতামায়ন হয় ৫. বীজতলায় অনধিক ১০ সেন্টিমিটার উঁচু ও মাত্র কয়েকটি পাতাধারী গাছেও বোতাম উৎপাদিত হতে দেখা যায় ৬. চারা রোপণ করতে দেরি হলে কিংবা রোপণের পর কোনো কারণে চারার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হলে বোতামায়নের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। প্রতিকার : বোতামায়নের সমস্যা দূর করতে হলে বর্ষজীবী বা আগাম জাতে আগাম মৌসুমে লাগাতে হয়। গাছ যাতে দ্রুত বাড়ে তার নিশ্চয়তা বিধান করতে হয়। বর্ষজীবী জাতের চারা এমনভাবে লাগাতে হয় যাতে তাপমাত্রা কমার আগেই আকারে বড় হয়ে যায়। মখমলায়ন : ফুলকপির প্রাক-মঞ্জুরি ঢিলেঢালা হয়ে মখমলের মতো রূপ ধারণের নাম মখমলায়ন। এ অবস্থায় প্রাক-মঞ্জুরি কিছুটা ফেটে যায়, উপরিভাগ ঠাসা, দৃঢ় ও মসৃণ না হয়ে কিঞ্চিত নমনীয় ও উঁচু-নিচু হয়ে যায়। প্রাক-মঞ্জুরি থেকে সাদা ফুলকুড়ি হয়ে উপরের দিকে কিছুটা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। প্রাক-মঞ্জুরি উৎপাদনের সময় তাপমাত্রার উঠানামা বেশি হলে এন অবস্থা সৃষ্টি হতে দেখা যায়। ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ : ফুল ফোটা শুরু হওয়ার আগেই ফুলকপি বেশ দৃঢ় থাকা অবস্থায় তা সংগ্রহ করা উচিত। অন্যথায় কপি ফেটে যেতে পরে কিংবা রঙ খারাপ হয়ে যেতে পারে। ঠান্ডা গুদমে ৩২ ফা. তাপে এক মাস রাখা যায়। জমি থেকে তোলার প্রায় সপ্তাহখানেক আগে নেপথলিন এসেটিক এসিড ছিঁটিয়ে পরে ঠান্ডা পরিবেশে দেড় মাস পর্যন্ত ফুলকপি অবিকৃত রাখা যায়। বীজ উৎপাদন : ফুলকপি খাওয়ার উপযোগী অবস্থায় গাছ মাটিসহ তুলে অন্যত্র রোপণ করলে বীজ উৎপন্ন হতে পারে। ফুলকপির উন্নয়ন : বাংলাদেশে ফুলকপির জাত উন্নয়নের যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা কিছু কিছু স্থানীয় জাতের চাষ করে। বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট রূপা নামে একটি জাতের উদ্ভাবন করেছে। বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণ জমিতে ফুলকপির বর্ষজীবী আগাম জাতের চাষ হয়। এগুলো চাষে বোতায়মায়ন একটি বড় সমস্যা। প্রতি বছর এর দরুন কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আগাম জাতগুলোর গাছ প্রাক-মঞ্জুরি উৎপাদন করার আগে মাত্র কয়েকটি পাতা উৎপাদন করে, ফলে এগুলোর ফলন কম হয়। কোনো কোনো সময় আমদানিকৃত নাবী জাত দেরিতে লাগলে গাছ প্রাক-মঞ্জুরি উৎপাদন করতে পারে না, অথবা প্রাক-মঞ্জুরি বের হতে বা তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়ে যায়, যার ফলে ফসল নষ্ট হয়। উপরোক্ত পরিস্থিতির আলোকে বাংলাদেশের ফুলকপির জাত উন্নয়নের উদ্দেশ্য নিম্নরূপ হওয়া উচিত। ক. উৎকৃষ্ট গুণসম্পন্ন এবং উচ্চ ফলনশীল মাঝ মৌসুমী জাত উদ্ভাবন করা দরকার খ. এমন বর্ষজীবী জাত বিমুক্ত করা যায় গাছ দ্রুত বাড়ে গ. জাত এমন হয় যেন উচ্চ (৩০-৩৫০ সে.) তাপমাত্রায় গাছের বৃদ্ধি তেমন ব্যাহত না হয় ঘ. শঙ্কর জাত উদ্ভাবন করা প্রয়োজন। লেখক: উত্তম সরকার

Comments 0


Share

Copyright © 2024. Powered by Intellect Software Ltd