রসুন চাষ
ভূমিকা
রসুন খুবই পুষ্টিকর৷ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ১৭ টি এমাইনো এসিড আছে৷ পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে রসুনের রসে জীবাণুনাশক ক্ষমতা রয়েছে ৷ রসুনের তেল বাত, সর্দি-কাশি, একজিমা, গলা, ত্বক ও ফুসফুসের রোগ, হৃদরোগ এবং বদহজম, অম্লাধিক্য প্রভৃতি পেটের পীড়ায় খুবই উপকারী৷ রসুনের তেলে রক্তের কোরেস্টরল এর পরিমাণ কমিয়ে উচ্চ রক্ত চাপের রোগীদের রক্ত চাপ কমিয়ে আনে৷ রসুন জ্বর, হুপিং কাশি, ফুসফুসের গ্যাংগ্রিন ইত্যাদিতেও বিশেষ উপকারী৷ ঘাম বাড়ানোর জন্যও পচননিবারক হিসেবেও ব্যবহার আছে৷ দুধসহ রসুন একসঙ্গে ফুটিয়ে কাথ তৈরী করে অল্প মাত্রায় ব্যবহার করলে হিষ্ট্রিশা ও সাইটিকা রোগের বিশেষ উপকার পাওয়া যায়৷রসুনের কোষ কানে রাখলে কর্ণশুল ভাল হয়৷ রসুনের কোশ তেলে ভেজে সেই তেল বাত রোগ, দাদ ও অন্যান্য ক্ষতে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়৷রসুনে ক্যান্সারের প্রতিরোধ ক্ষমতাও রয়েছে, উদ্ভিদের রোগ দমনেও রসুনের ব্যবহার রয়েছে৷
জাত
রসুনের বিশেষ জাত প্রকরণ নেই, তবে ক্রেয়ল, ইটালিয়ান ও তাহিতি নামে জাতগুলি উচ্চ ফলনশীল৷বাংলাদেশে দুই প্রকারের রসুন চাষ হয়ে থাকে - দেশী ছোট আকারের রসুন ও বিদেশী বড় আকারের রসুন
জলবায়ু ও মাটি
রবি মৌসুম, উচ্চ আলো ক্ষমতা, দীর্ঘ দিবস রসুন চাষের জন্য উপযোগী৷ ১৫-২৫ সে. গ্রেড তাপমাত্রা পেঁয়াজ উত্পাদনের জন্য উপযোগী৷ রসুন নাতিশীতোষ্ঞ অঞ্চলেও ভাল হয়৷ তবে বৃষ্টিপাত ও আদ্রতা সহ্য করতে পারে না৷
দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য উত্তম৷ মাটি উর্বর এবং সেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়
চাষাবাদ পদ্ধতি
জমি তৈরি ও চারা রোপণ:
৪-৫ বার গভীর চাষ ও মই দিয়ে, আগাছা পরিষ্কার করে, মাটি ঝুরঝুরে করে জমি তৈরি করতে হবে৷ আগাছামুক্ত ঝুরঝুরা সমতল মাটি রসুনের জন্য উত্তম৷
বীজ বা চারা বপন:
এক হেক্টর জমির জন্য ৩৫০-৫০০ কেজি রসুনের কোয়া প্রয়োজন ( শতকে ১-১.৫ কেজি )৷ ১৫ সেন্টিমিটার দূরে দূরে সারি করে ৭-৮ সেন্টিমিটার দূরে দূরে ৫- ৭ সেন্টিমিটার গভীর নালায় কোষ বা কোয়াগুলি লাগাতে হবে৷ রসুন সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে লাগাতে হবে৷
সার ব্যবস্থাপনা:
সারের নাম পরিমাণ / ৪০ বগᐂমিটার বা শতক
গোবর ৪০ কেজি
ইউরিয়া ৭০০ গ্রাম
টিএসপি ৬০০ গ্রাম
এমপি ৬০০ গ্রাম
গোবর, টিএসপি ও অর্ধেক এমপি সার জমি তৈরীর সময় এবং বাকী অধেক এমপি ও ইউরিয়া সার চারা গজালে ২-৩ সপ্তাহ পর পর ২-৩ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে৷
অন্তর্বতীকালীন পরিচর্যা
সেচ ব্যবস্থাপনা:
রসুনের সেচের প্রয়োজন খুব বেশী৷ প্রথম অবস্থায় ৫-৭ দিন অন্তর হালকা সেচ দেওয়া হয়৷ পরে সেচের ক্রম কমে যায়, কিন্তু গভীরতা বাড়ে৷ পেঁয়াজে মোট ৭-৮টি সেচ লাগতে পারে৷ অবশ্য আবহাওয়ার তারতম্যের ওপর সেচের প্রয়োজনীয়তা ও সংখ্যা নির্ভর করে৷ বাল্ব পুষ্ট হওয়ার মুখে সেচ দেওয়া উচিত নয়৷ সার প্রয়োগের পরও পানি সেচ দেওয়া প্রয়োজন৷
রসুন জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না৷ সুতরাং রসুনের জমিতে পানি নিকাশের ব্যবস্থা থাকতে হবে৷
মাধ্যমিক পরিচর্যা:
রসুনের জমি সব সময় পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার৷ এছাড়া বার বার নিড়ানি দিয়ে মাটির উপরের স্তর ভেঙে দিয়ে গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে৷ এতে করে মাটির মধ্যে বায়ু চলাচল করে ও রসুন মোটা হওয়ার সুযোগ পায়৷ গরম পড়লে, পাতা ভেঙ্গে দিলে রসুন মোটা হয়৷
ক্ষতিকর পোকা মাকড়
কাটুই পোকা
মাকড়
কাটুই পোকা :
ক্ষতির ধরন:
শুককীট চারা গাছের ক্ষতি করে৷
শুককীট দিনের বেলায় গাছের গোড়ায় বিশ্রাম নেয় এবং রাতে উপরে উঠে চারা গাছের গোড়া কেটে দেয়৷ শুককীট যা খায় তার চেয়ে অনেক বেশী চারা বা গাছের গোড়া কেটে নষ্ট করে৷
cutworm.jpg
ছবি : কাটুই পোকা আক্রান্ত রসুন গাছ
ছবি সূত্র : Photo coustesy of Clemson University Department of Entomology
প্রতিকার:
প্রতিদিন ভোরে কাটা গাছের গোড়ায় মাটি খুঁড়ে শুককীটগুলো মারতে হবে৷
ফসল কাটার পর জমিতে চাষ দিয়ে শুককীট ও মুককীট যদি বের হয়ে যায় তখন হাতে ধরে বা পাখি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷
বিষটোপ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷ ১০০ গ্রাম গমের ভূষি আথবা ধানের কুড়া, ১০০ গ্রাম গুড় এবং ২০০ গ্রাম পাদান ৫০০ এস পি সবগুলো একত্রে মিশিয়ে প্রয়োজনীয় পানি দিয়ে মণ্ড তৈরী করতে হবে৷ সন্ধ্যার পর মণ্ড ছিটিয়ে দিলে শুককীট আকষীᐂত হবে এবং এই বিষটোপ খেয়ে মারা যাবে৷
মিলিলিটার পরিমাণ সুমিসাইডিন ২০ ইসি বা রিপকডᐂ ১০ ইসি বাসিমবুশ ১০ ইসি ১ লিটার পরিমাণ পানির সাথে মিশিয়ে সন্ধ্যার সময় জমিতে ছিটিয়ে দিলে এই পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷
রোগ দমন
গোড়া পচাঁ:
রোগের লক্ষণ:
আক্রান্ত গাছের পাতা প্রথমে হলুদ হয়ে যায় এবং পরবতীᐂতে পাতা মারা যায়৷
কোন কোন সময় গাছের গোড়ায় সাদা ছত্রাকাবরণ দেখা যায়৷
ফসল সংগ্রহের পর ও রোগের লক্ষণ দেখা যায়৷ আক্রান্ত ফসল সংগ্রহ করা হলে সংরক্ষিত রসুনে পচন ধরে৷
rot.jpg
ছবি : গোড়া পচাঁ রোগাক্রান্ত রসুন গাছ
ছবি সূত্র:<a href='
' target='_blank'> http://www.garlicworld.co.uk'] http://www.garlicworld.co.uk'[/url] target='_blank'>
' target='_blank'> http://www.garlicworld.co.uk]
http://www.garlicworld.co.uk[/url]
প্রতিকার:
চারা গজানোর পর ও তারপর প্রতি এক মাস পর ১৫ গ্রাম ব্যাভিস্টিন ৫০ ডব্লিউ ১০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে৷
ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ মুদ্রণ ইমেল
কোয়া লাগানোর প্রায় ৪ মাস পর পাতা আগা থেকে হলুদ হয়ে মরা আরম্ভ করলে রসুন হাত দিয়ে উঠিয়ে নিয়ে ৪-৫ দিন ছায়ায় শুকানোর পর সংরক্ষণ করতে হবে৷ হেক্টর প্রতি প্রায় ৪-১০ টন ( প্রতি শতকে ৬০ কেজি) রসুন উত্পাদন হয়ে থাকে৷
Comments 0