ইস্তেখারা কি?
ইস্তেখারা শব্দের আভিধানিক অর্থ, কোনো জিনিসের জন্য কল্যাণ কামনা করা। ইস্তেখারা করা সুন্নাত।
আপনার যদি কোনো কাজ করার ইচ্ছা হয় কাজটি আপনার জন্য কল্যাণকর নাকি বিপজ্জনক এ বিষয়ে আল্লাহর কাছ থেকে পরামর্শ চাওয়াকেই ইস্তেখারা বলে।
মহান আল্লাহর কাছে কোনো জিনিসের ক্ষেত্রে কল্যাণ কামনা করা। কোনো কিছু নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা থাকলে ইস্তেখারার নামাজ পড়া হয়। এ নামাজ খুব নিয়ামতপূর্ণ ও কার্যকরী। ইসলামের সূচনা থেকেই এর মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করেছে মানুষ।
ইস্তেখারার শর্ত
১. নিয়্যাত করা (মনে মনে)। ২. প্রয়োজনীয় সকল চেষ্টা করা। অর্থাৎ ওয়াসিলা গ্রহণ করা। ৩. আল্লাহর হুকুমে খুশি থাকা। ৪. শুধু হালাল কিংবা বৈধ বিষয়ে ইস্তেখারা করা। ৫. তাওবা করা, অন্যায় কিছু গ্রহণ না করা, হারাম উপার্জন না করা, হারাম খাবার ভক্ষণ না করা। ৬. যে বিষয়গুলোর নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে অর্থাৎ বিষয়টি তার ইচ্ছার অধীনে সেসব বিষয়ে ইস্তেখারা না করা।
ইস্তেখারা করার নিয়ম
যেহেতু ইস্তেখারা করা সুন্নাত। আর ইস্তেখারা মানুষের জন্য অনেক কল্যাণের। সেহেতু ইস্তেখারা করার জন্য উত্তম হলো-
১. নামাজের শুরুতে ভালোভাবে ওজু করে নেওয়া।
২. ইস্তেখারার উদ্দেশ্যে দুই রাকাআত নামাজ পড়তে হয়। এ ক্ষেত্রে সুরা ফাতেহার পরে যে কোন সুরা পড়া যায়।
৩. নামাজের সালাম ফেরানোর পর আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও মর্যাদার কথা মনে করে একান্ত বিনয় ও আন্তরিকতার সঙ্গে দোয়া পড়া। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, যখন তোমাদের কেউ কোনো কাজের ইচ্ছা করে তখন সে যেন ফরজ নামাজ ছাড়া দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে নেয়। এরপর (এই) বলে (দোয়া করে)-
ইস্তেখারার দোয়া
কোনো কাজে ভালো মন্দ বুঝতে না পারলে, মনে ঠিক-বেঠিক, উচিত-অনুচিত বা লাভ-লোকসানের দ্বন্দ্ব তৈরি হলে আল্লাহর নিকট মঙ্গল প্রার্থনা করতে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নিম্নের দোয়া পাঠ করতে হবে।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ ، وَأَسْتَعِينُكَ بِقُدْرَتِكَ ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلا أَقْدِرُ ، وَتَعْلَمُ وَلا أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلامُ الْغُيُوبِ ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ () خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي وَعَاجِلِهِ وَآجِلِهِ ، فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي وَعَاجِلِهِ وَآجِلِهِ فَاصْرِفْهُ عَنِّي ، وَاصْرِفْنِي عَنْهُ ، وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ، ثُمَّ رَضِّنِي بِهِ উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইবি আস্তাখীরুকা বিইলমিকা অ আস্তাক্দিরুকা বি কুদরাতিকা অ আসআলুকা মিন ফায্বলিকাল আযীম, ফাইন্নাকা তাক্দিরু অলা আক্দিরু অতা’লামু অলা আ’লামু অ আন্তা আল্লা-মুল গুয়ুব। আল্লা-হুম্মা ইন কুন্তা তালামু আন্না হা-যাল আমরা খাইরুল লি লি দীনি অ মাআশি অ আকিবাতি আমরি অ আ-জিলিহি অ আ-জিলিহ, ফাক্দুরহু লি, অ য়্যাসসিরহু লি, সুম্মা বা-রিক লি ফিহ। অ ইন কুন্তা তালামু আন্না হা-যাল আমরা শাররুল লি ফি দীনি অ মাআশি অ আ’-কিবাতি আমরি অ আ’-জিলিহি অ আ-জিলিহ, ফাস্বরিফহু আন্নি অস্বরিফনি আনহু, অক্বদুর লিয়াল খাইরা হাইসু কা-না সুম্মা রায্বযিনি বিহ।
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট তোমার ইলমের সাথে মঙ্গল প্রার্থনা করছি। তোমার কুদরতের সাথে শক্তি প্রার্থনা করছি এবং তোমার বিরাট অনুগ্রহ থেকে ভিক্ষা যাচনা করছি। কেননা, তুমি শক্তি রাখ, আমি শক্তি রাখি না। তুমি জান, আমি জানি না এবং তুমি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা। হে আল্লাহ! যদি তুমি এই কাজ আমার জন্য আমার দ্বীন, দুনিয়া, জীবন এবং কাজের বিলম্বিত ও অবিলম্বিত পরিণামে ভালো জান, তাহলে তা আমার জন্য নির্ধারিত ও সহজ করে দাও। তাতে আমার জন্য বরকত দান কর। আর যদি তুমি এই কাজ আমার জন্য আমার দীন, দুনিয়া, জীবন এবং কাজের বিলম্বিত ও অবিলম্বিত পরিণামে মন্দ জান, তাহলে তা আমার নিকট থেকে ফিরিয়ে নাও এবং আমাকে ওর নিকট থেকে সরিয়ে দাও। আর যেখানেই হোক মঙ্গল আমার জন্য বাস্তবায়িত কর, অতঃপর তাতে আমার মনকে পরিতুষ্ট করে দাও।
ইস্তিখারার সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি
অনেক সময় তো দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন হয়। উপরোক্ত পদ্ধতিতে ইস্তিখারা করার সময় ও সুযোগ পাওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতিতে একটি সংক্ষিপ্ত দোয়া নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন। দোয়াটি হল-
اللّهُمّ خِرْ لِي وَاخْتَرْ لِي উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা খিরলি ওয়াখতারলি অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে কল্যাণ দান করুন এবং আমার জন্য আপনিই কোন বিষয়টি অবলম্বন করা উচিত তা নির্বাচন করে দিন। (জামে তিরমিজি: ৩৫১৬)
এমন আরেকটি দোয়া হচ্ছে-
اللّهُمّ أَلْهِمْنِي رُشْدِي وَأَعِذْنِي مِنْ شَرِّ نَفْسِي উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আলহিমনি রুশদি ওয়াআয়িজনি মিন শাররি নাফসি। অর্থ: হে আল্লাহ! আমার অন্তরে সঠিক পথের ইলহাম করুন এবং নফসের মন্দত্ব থেকে আমাকে রক্ষা করুন। (জামে তিরমিজি: ৩৪৮৩)
Comments 0