হাঁস বা মুরগির ডিম থেকে কৃত্রিমভাবে বাচ্চা ফোটানোর জন্য বিভিন্ন হ্যাচারি শিল্পে সাধারণত বড় বড় ইনকিউবেটর ব্যবহার করা হয়ে থাকে যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সময় সাপেক্ষ। ব্যয়বহুল আর সহজলভ্য না হওয়ায় সাধারণ খামারিরা এটি ব্যবহার করতে পারেন না। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য যে তাপমাত্রা প্রয়োজন হয় তা ইনকিউবেটরের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়।
ইনকিউবেটরের মাধ্যমে একসাথে অনেকগুলো ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে হাওড় অঞ্চলের খামারিরা তৈরি করেছেন অভিনব এক পদ্ধতি। এই পদ্ধতি হাওড় অঞ্চলের খামারিদের হাঁস পালন করে জীবিকা নির্বাহের পথকে সুগম করে দিয়েছে। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর এই প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত হয়েছে গ্রাম্য বাংলায় প্রাপ্ত সব দেশীয় উপাদান, ফলে এই প্রযুক্তি দামে যেমন সস্তা তেমনি ফলপ্রসূ।
সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের (লেভেল-৫, সেমিষ্টার-১) শিক্ষার্থীরা নেত্রকোনা জেলার মদন থানার একটি হাওড় এলাকায় পোল্ট্রি মেডিসিন ফিল্ড ভিজিট করতে গিয়ে অভিনব এই পদ্ধতি প্রত্যক্ষ করেছেন। ঐ অঞ্চলের কোনাবাড়ি গ্রামে ‘সততা হ্যাচারি’ এর মালিক মোঃ আইনুল হক কুতুবি ও অন্যান্য খামারিরা হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর এই অভিনব পদ্ধতি আবিস্কার করেছেন। প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে পাওয়া যায় এমন উপাদান দিয়ে তারা এই কৃত্রিম ইনকিউবেটর তৈরি করেছেন।
ইনকিউবেটর তৈরি সর্স্পকে খামারিরা জানান, এ পদ্ধতিতে ২৮ দিনে ৮০০ থেকে ৯০০ হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো যায়। নতুন এই ইনকিউবেটর তৈরি করতে দরকার হয় চালের ভূসি, বাশেঁর বেডা, বাশেঁর চোঙ্গা, হারিকেন বাতি, বস্তা ইত্যাদি। ইনকিউবেটরের তাপমাত্রা ৭২ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠে থাকে। ‘সততা হ্যাচারি’-র মালিক আইনুল হক কুতুবি বলেন, হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য প্রথম ১৪ দিন এক ধরনের ইনকিউবেটরে রাখা হয় ও পরের ১৪ দিন অন্য এক ইনকিউবেটরে রাখা হয়। প্রথম ইনকিউবেটর কে বলে ”চোঙা” এবং দ্বিতীয় ইনকিউবেটর এর নাম ”বেড”। ৩-৬টা চোঙা ইনকিউবেটর পাশাপাশি রাখা হয়। ৩ ফুট উচ্চতার এই চোঙাগুলোর মেঝেতে ধানের ভূসি ব্যবহার করা হয়। এই চোঙাগুলোর একটিতে হারিকেন রাখলে পাশেরটিতে রাখা হয় ডিম। এতে হারিকেন রাখা চোঙাটি থেকে পাশে ডিম রাখা চোঙাটিতে তাপ সঞ্চালিত হয়। এভাবে চোঙায় ডিমগুলো ১৪ দিন রাখার পর শেষের ১৪ দিনের জন্য বেডে নেওয়া হয় (ছবি)।
ডিমে তাপ সঠিকভাবে পাচ্ছে কি না এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ‘সততা হ্যাচারি’ এর মালিক বলেন, আমরা চোখের পাতার উপরে ডিম রেখে বুঝতে পারি তাপমাত্রা ঠিক আছে কি না। তিনি আরো বলেন, এ পদ্ধতিতে এক ব্যাচে ১০০টি ডিম এর মধ্যে প্রায় ৮০টি ডিম থেকে সফলভাবে বাচ্চা ফুটানো যায়। এ পদ্ধতিতে খুব সহজে এবং কম খরচে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে হাঁস পালন করে খামারিরা অধিক লাভবান হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
শীতকালে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয় না বলে শীতকালের ৪ মাস এ পদ্ধতি বন্ধ রাখা হয়। মুরগীর ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে সময় লাগে ২০-২২ দিন অন্যদিকে হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে সময় লাগে ২৮-২৯ দিন ফলে হাওড় অঞ্চলের খামারিদের তৈরি এই কৃত্রিম ইনকিউবেটরের মাধ্যমে হাঁসের ডিম ফুটানো গেলেও মুরগীর ডিম ফুটানো সম্ভব নয় কারণ এটি ২৮ দিনের উপযোগী করে তৈরা করা হয়েছে। গ্রাম অঞ্চলে পাওয়া যায় এমন উপাদান দিয়ে তৈরি এই প্রযুক্তির অধিক ব্যবহারের মাধ্যমে যন্ত্রচালিত ইনকিউবেটরের অত্যাধিক খরচ ও পারিশ্রমিক সাশ্রয় হবে এবং বানিজ্যিকরণের মাধ্যমে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্পকে আরো উন্নত করা সম্ভব হবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানান।
Comments 0